মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন নিহত মানিকগঞ্জে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সভা নকলার নবাগত ওসিকে জামায়াতের ফুলেল শুভেচ্ছা পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু’র বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রপ্রচারের অভিযোগ শ্রীমঙ্গলে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির দায়ে মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্প থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তা নেই সেতু নেই, নেই কোন স্কুল: উল্লাপাড়ার অবহেলিত গ্রামের নাম রশিদপুর নয়াপাড়া মোংলায় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় কালিয়ায় লুটপাট, ভাংচুর ও হুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান ভালুকায় দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা

কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে সংশয়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১

কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ট্যানারি ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র একটি। চামড়া বিক্রির জন্য তাই ঢাকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল চট্টগ্রাম। অন্যদিকে প্রতি বছরই জেলাটিতে বাড়ছে পশু কোরবানির সংখ্যা। তবে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার বাজার কয়েক বছর ধরে বেশ মন্দা। এবার তাতে যুক্ত হয়েছে করোনার প্রভাব। মন্দা ভাব রয়েছে চামড়ার বৈশ্বিক বাজারেও। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের অধিকাংশ ব্যবসায়ী। জানা যায়, বিক্রি করতে না পেরে গত বছর চট্টগ্রামে নষ্ট হয় হাজার হাজার কাঁচা চামড়া। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক হিসাবে, ওই বছর প্রায় ২২ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে রাস্তায়ই। মূলত চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকা, ঢাকা থেকে ক্রেতা না আসায় এ অবস্থা তৈরি হয়। গতবারের সেই অবস্থা এবার আরো প্রকট হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে কয়েক বছর ধরে নষ্ট হচ্ছে কাঁচা চামড়া। মূলত চামড়া কেনায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীলতা ও ট্যানারির সংখ্যা কমে আসা এর অন্যতম প্রধান কারণ। ঢাকার ব্যবসায়ীরা না এলে তারা চামড়া কিনে বিক্রি করতে পারেন না। আবার ঢাকার ব্যবসায়ীরা বাকিতে তাদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে যান। কিন্তু বকেয়া পরিশোধে তারা গড়িমসি করেন। যার কারণে পুঁজি না থাকায় তারা ঠিকভাবে চামড়া কিনতে পারেন না। অন্যদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম না জেনে-বুঝে চামড়া বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। তাদের দেয়া দাম অনুযায়ী চামড়া কেনা সম্ভব হয় না। যার কারণে গত দুই বছর অনেক চামড়া রাস্তায়ই নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চট্টগ্রামে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায় জৌলুস ছিল। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের অঞ্চলে চামড়া শিল্পের বিকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে এটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। যার কারণে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে ১৬টি ট্যানারি গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর আরো ছয়টি ট্যানারি নির্মাণ হয়। তবে চামড়ার নি¤œমুখী দর ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এ খাতের ব্যবসা। লোকসানের কারণে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ২০টি ট্যানারি বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েক বছর বন্ধ হয়েছে বাকিগুলোও।
জানা যায়, কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায় আধিপত্য ছিল মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারির। ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এ দুই ট্যানারি চট্টগ্রামে কোরবানি দেয়া প্রায় অর্ধেক পশুর চামড়া কিনত। তবে ইটিপি না থাকায় ২০১৬ সাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় মদিনা ট্যানারি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসা আর আগের মতো নেই। দেশে চামড়ার চাহিদা থাকার পরও বাজারে বিক্রি তুলনামূলক কম। চট্টগ্রামে চামড়ার ক্রেতা এখন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছে গত বছরের পাওনা এখনো আছে। করোনার কারণে চলতি বছর কোরবানি কম হওয়ার আশঙ্কাও আছে। তিনি আরো বলেন, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা কাঁচা চামড়ার প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রতি বছর চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু এখন দেশে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। যার কারণে কোরবানির সময় শ্রমিক পাওয়া যাবে কিনা, সে বিষয়েও আমরা আশঙ্কায় আছি। সরকার যদি শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে বিধিনিষেধ সীমিত করে, তাহলে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ সহজ হবে।
চট্টগ্রামের আতুরার ডিপোর আড়তদাররা জানান, বৈশ্বিকভাবেই চামড়ার বাজারে মন্দা চলছে। সরকার যে দাম বেঁধে দেয়, তাতে গরুর চামড়ার দাম ৪০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকার মধ্যে পড়ে। কিন্তু এ দামে চামড়া কিনতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাছ্ড়াা চামড়ার সংরক্ষণ খরচ, কর্মচারীর বেতনসহ আরো খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে লাভের মুখ দেখতে চাইলে কেনা দামের চেয়ে অন্তত ২০০ টাকা বেশি দরে চামড়া বিক্রি করতে হবে। কিন্তু সেই দাম তারা পান না।
এদিকে, চট্টগ্রামে কয়েক বছর ধরেই পশু কোরবানির সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এবার সম্ভাব্য কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯ হাজার। চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় উৎপাদন ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। যার মধ্যে গবাদিপশু ৫ লাখ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ ৬৩ হাজার ১৩৬টি, ছাগল ও ভেড়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩টি। অন্যান্য পশু রয়েছে ৯৫টি। সেই হিসাবে এ বছর প্রায় ৫২ হাজার পশুর ঘাটতি রয়েছে চট্টগ্রামে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম জেলার বছরওয়ারি পশু জবাই ও উৎপাদনের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। যার বিপরীতে জবাই হয় ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু। সর্বশেষ ২০২০ সালে স্থানীয় উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি। সেখানে জবাই করা হয়েছিল প্রায় সাত লাখের বেশি পশু।
সার্বিক বিষয় প্রসঙ্গে রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বলেন, চামড়ার বাজার এখন নি¤œমুখী। চাহিদাও এখন কম। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও চামড়ার বাজারে মন্দা চলছে। সেখানে করোনার কারণে লকডাউন চলছে। চলতি বছর করোনার কারণে কোরবানিও কম হবে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম নির্ধারণ করবে চাহিদার ওপর নির্ভর করে। যার কারণে চামড়া নিয়ে আমরা নিজেরাই আশঙ্কার মধ্যে আছি। এভাবে চলতে থাকলে চামড়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com