সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন

কোরবানি কিভাবে?

উম্মে হানি বিনতে আবদুর রহমান:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। কোরবানির সাথে বান্দার তাকওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। কুরআনে বর্ণিত রয়েছেÑ ‘আপনি বলুন, আমার সালাত আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য যিনি প্রতিপালক বিশ্ব জাহানের’ (সূরা আনআম-১৬৩)। হজরত ইবরাহিম আ: বৃদ্ধ বয়সে নেককার সন্তান কামনা করেন। সূরা সফফাতের ১০০-১০১ নং আয়াতে এর বর্ণনা রয়েছে। হজরত ইবরাহিম আ:-এর দোয়ার ফলে প্রথম সন্তান হজরত ইসমাইল আ:কে মহান আল্লাহ দান করেন। হজরত ইসমাইল আ: যখন চলাফেরার মতো বয়সে পৌঁছলেন তখন মুজাদ্দিদে আম্বিয়া হজরত ইবরাহিম আ: একাধারে তিন রাত স্বপ্ন দেখেছেন যে, ‘আল্লাহ বলছেন, হে ইবরাহিম! তুমি আমার রাস্তায় তোমার একমাত্র পুত্রকে কোরবানি করো।’
হজরত ইবরাহিম আ: আত্মসমর্পণের মূর্তিমান প্রতীক হয়ে আল্লাহ পাকের আদেশ যথাসম্ভব দ্রুত পালনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। মহান এ পরীক্ষাটি শুধু ইবরাহিম আ:-এর ব্যক্তিত্বের সাথে যুক্ত ছিল না, এ পরীক্ষার বড় একটি অংশ ছিল তার পুত্র। ইবরাহিম আ: নিজের স্বপ্ন পুত্র ইসমাইল আ:-এর কাছে বর্ণনা করলেন। পুত্র ছিলেন বাবার মতোই মুজাদ্দিদ। আল্লাহর আদেশ শুনে তৎক্ষণাৎ মস্তক অবনত করে দিলেন এবং বললেনÑ ‘যদি এটাই আল্লাহর ইচ্ছা হয়ে থাকে তবে আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন।’ অবশেষে পিতা-পুত্র এ অভিনব ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানির স্থানে পৌঁছলেন। হজরত ইসমাইল আ: পিতাকে বললেনÑ ‘পিতা! আমাকে খুব শক্ত করে বেঁধে নিন, যাতে আমি বেশি ছটফট করতে না পারি, আপনার পরনের কাপড় সামলে নিন, যাতে আমার রক্তের ছিটা তাতে না পড়ে, এতে আমার সওয়াব কমে যেতে পারে।’
একমাত্র পুত্রের মুখে এসব কথা শুনে পিতার মানসিক অবস্থা যে কি তা সহজেই বোঝা যায়, তবু তিনি (ইবরাহিম আ:) দৃঢ়তার পাহাড় হয়ে জবাব দিলেনÑ ‘বৎস! আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য তুমি আমার উত্তম সহায়ক হয়েছ।’ যখন ইবরাহিম আ: ছুরি চালাতে লাগলেন তৎক্ষণাৎ আল্লাহর ওহি নাজিল হলো ইবরাহিম আ:-এর ওপরÑ ‘হে! ইবরাহিম! তুমি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছ, নিঃসন্দেহে এ বড় কঠিন পরীক্ষা ছিল, এখন পুত্রকে ছেড়ে দাও!’ এরপর জিবরাইল আ:-এর আনীত ভেড়া যা তিনি (জিবরাইল আ:) আল্লাহর আদেশে নিয়ে এসেছিলেন সে ভেড়া জবাই করেন। এই সেই কোরবানি যা আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে কবুল করেছেন যে এর স্মৃতিস্বরূপ সব মুসলমানের জন্য তা ইবরাহিমি প্রতীক সাব্যস্ত হয়ে রইল এবং আজো প্রতি বছর ১০ জিলহজ মুসলিম বিশ্বে এই কোরবানির প্রতীকটি আনন্দ এবং সম্মানের সাথে পালন করা হয়।
আল্লাহর কোনো নেক বান্দা যখন আল্লাহর সামনে শির নত করে নিজের সব ভাবনাকে, নিজের সব ইচ্ছাকে কোরবান করতে উদ্যত হয়; তখন রব্বে কারিম তাকে পার্থিব কষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং পরকালের সওয়াবও তার আমলনামায় লিখে দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার নৈকট্য লাভের শক্ত একটি মাধ্যম কোরবানি।
স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন তাদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ।
কোরবানি মানে কুপ্রবৃত্তির দমন, আল্লাহ বলেন- ‘মনে রেখো! কোরবানির জন্তুর গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছে না, বরং তার কাছে কেবলমাত্র তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে’ (সূরা হজ-৩৭)।
হজরত ইবরাহিম আ:-এর আনুগত্য আল্লাহর প্রতি ছিল শর্তহীন, আল্লাহ কুরআনে বলেছেনÑ ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করলাম’ (সূরা বাকারা-১২৪)। আল্লাহ আমাদের নিয়ত পরিশুদ্ধ করে দিন এবং আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমীন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com