রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন

মরিচের ঝাঁঝালো সব তথ্য

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

এমন কী সহজলভ্য ফসল আছে; যা একাধারে ফল, সবজি, মসলা, ওষুধি ও রসনাবিলাসে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, অথচ খেতে বেশ ঝাঁঝালো? হ্যাঁ, মরিচ বা লঙ্কা এমনই এক উদ্ভিদের ফল, যা ক্যাপসিকাম গণের সোলানেসি পরিবারের সদস্য। এটি প্রতিদিনের রান্নার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কারণ খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্য বাড়াতে এর বিকল্প নেই। কাঁচা, শুকনা, গুঁড়া কিংবা বাটা সব ধরনের মরিচই রান্নার কাজে নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে বিবেচিত। পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে মরিচ কিংবা মসলাদার খাবার গ্রহণ করে থাকে।
মরিচের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: মরিচের উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। তবে বলিভিয়াকে বন্যমরিচের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। মৃদু ঝালের বেলমরিচ থেকে মাঝারি হালাপিনিউ থেকে শুরু করে রুক্ষ্ম ত্বকের ভয়ানক নাগা জলোকিয়া (ভূত জলোকিয়া) পর্যন্ত প্রায় সব প্রজাতির মরিচের পূর্বপুরুষ বলিভিয়ান। বলিভিয়ায় কয়েক শতাব্দী ধরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো রেইনবো চিলি একটি অত্যাশ্চর্য সুন্দর উদ্ভিদ। অতি প্রাচীনকাল থেকেই মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অংশে মরিচের চাষ হতো। স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরির প্রতœতত্ত্ববিদ লিন্ডা পেরি এক গবেষণায় বাহামাস থেকে দক্ষিণ পেরু পর্যন্ত প্রাচীন পাথর এবং রান্নার হাঁড়িতে মরিচের সন্ধান পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন, আমেরিকার লোকেরা প্রায় ৬০০০ বছর আগে থেকে মরিচের চাষ শুরু করেছিল। তবে আরও গবেষণায় বেরিয়ে আসে, কমপক্ষে ৮০০০ বছর ধরে মানুষ মরিচের সাহায্যে খাবারকে মজাদার করছে।
প্রথমদিকে তারা বন্যমরিচ ব্যবহার করতেন। সম্ভবত এরসাথে আলু, দানা ও ভুট্টা যোগ করতেন। পরবর্তীতে অন্যান্য খাবারের অনুষঙ্গ হিসেবে মরিচের ব্যবহার হতে থাকে। বিশ্বজুড়ে বিস্ময়কর গতিতে মরিচের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৪২ সালে সমুদ্রযাত্রাকালে আরাওয়াক ভারতীয় তথা ক্যারিবিয়ানদের চাষ করা কিছু উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি চারাগুলো স্পেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। যা প্রাথমিকভাবে ইউরোপে অপ্রচলিত ছিল। পর্তুগীজরা ব্রাজিলের পারনাম্বুকোহ ট্রেডিং পোস্টে মরিচের সাথে পরিচিত হয়েছিল। সেখানকার অধিবাসীদের সাথে তামাক ও তুলার বিনিময়ে আফ্রিকায় মরিচের চারা নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমাদের উপমহাদেশেও এ মরিচ এনেছিল পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক। কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রার ৫০ বছরের মধ্যে ভারত, জাপান এবং চীনে পারনাম্বুকোহ মরিচের চাষ শুরু হয়। মোটামুটি সতেরো শতকের মধ্যে অ্যামেরিকান উপনিবেশগুলোয় ঝাল খাবারের বেশ প্রচলন শুরু হয়। যেখানে মরিচ একটি বিদেশি মসলা ছিল, সেখানে ১৯৯৫-২০০৫ সালের মধ্যে মরিচের ব্যবহার আগের চাইতে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মার্কিন কৃষি বিভাগের মতে, মার্কিনীরা এখন বছরে গড়ে ৫৯ পাউন্ড মরিচ খায়। যা মাথাপিছু অ্যাসপারাগাস, ফুলকপি বা সবুজ মটর খাওয়ার চাইতেও বেশি।
মরিচের ঝাল রহস্য: মরিচ বিভিন্ন আকারের ও রঙের হলেও প্রায় সব মরিচেরই যে বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, তা হলো ঝাল। মূলত মরিচে উৎপন্ন ক্যাপসাইসিন নামক রাসায়নিক পদার্থ ঝালের জন্য দায়ী। কেপসাইসিনের জন্য মরিচ ঝাঁঝালো হয়। কেপসানথিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থের জন্য মরিচ উজ্জ্বল ও লাল হয়। যদিও অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, মরিচের সবচেয়ে ঝাল অংশ হলো এর বীজ। প্রকৃতপক্ষে, মরিচের আগা থেকে নিচের দিকে বর্ধিত সাদা স্পঞ্জি স্তর বা প্ল্যাসেন্টাতেই উৎপন্ন হয় ক্যাপসাইসিন। মরিচের ঝালে অনেকের অস্বস্তি লাগলেও প্রতিদিন গড়ে ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করে। তবে মরিচের ভেতর উৎপাদিত ক্যাপসাইসিনকে পৃথক করতে পারলে মরিচ মোটেও ঝাল নয়। খাওয়ার সময় এর ক্যাপসাইসিনোইডগুলো মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে একটি রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়, যা উত্তাপ এবং শারীরিক ঘর্ষণ দ্বারা উত্তেজিত হয়। মানব শরীরের স্নায়ুকোষগুলোর ক্যাপসাইসিন সনাক্ত করার মত রিসেপ্টর রয়েছে, যা আমাদের মস্তিষ্কে বিপজ্জনক সংকেত প্রেরণ করে। আমাদের মস্তিষ্ক তাই বিপদের আশঙ্কা করে শরীরে এক ধরনের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। যার কারণে শরীর ঘামতে থাকে ও ত্বকে লালচে ভাব দেখা দেয়।
মরিচের ঝাল আসলে কোন স্বাদ নয়, মরিচ খাওয়ার পরে এ জ্বালা ভাবটি আসে শরীরের ব্যথা প্রতিক্রিয়া থেকে। ক্যাপসাইসিন মানব কোষে ঞজচঠ১ নামক প্রোটিন সচল করে দেয়। এ প্রোটিনের কাজ হচ্ছে তাপমাত্রা সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা। যখনই উত্তাপ অনুভূত হয়; তখনই মস্তিষ্ককে সতর্ক করে দেওয়া হয়। মস্তিষ্ক তড়িৎ সাড়া দিয়ে সেই স্থানে ব্যথার সংকেত পাঠায়। ঠিক যেমন ভুলবশত গরম হাঁড়িতে হাত লাগলে শরীরে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। একটি হালাপিনিউ মরিচে কামড় দেওয়ায় আর গরম চুলা স্পর্শ করায় মস্তিষ্ক একই ধরনের সংকেত পায় বলেছেন জোশুয়া টিউক্সবেরি নামের একজন আমেরিকান বাস্তুবিদ ও জীববিজ্ঞানী। যিনি ১০ বছর ধরে মরিচের উপর নানাবিধ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক বিজ্ঞনী মনে করেন, এ ফল স্তন্যপায়ী প্রাণির আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ক্যাপসাইসিন উৎপন্ন করে থাকে। তবে টিউক্সবেরির সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, মরিচ এ ক্যাপসাইসিন তৈরি করে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য অণুজীব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য। মরিচের আরেক শত্রু হলো পাখি। কারণ পাখির শরীরে ক্যাপসাইসিন সনাক্ত করার মত রিসেপ্টর নেই। তাছাড়া মরিচের বীজ হজম করতে পারার মত এনজাইমও পাখির শরীরে নেই। তাই পাখির বিষ্ঠার সাথে অক্ষত মরিচের বীজ প্রাকৃতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মরিচের চারা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। মরিচ ও মসলার ব্যবহার বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো এটি খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তবে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তা হলো, মরিচের দুর্দান্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্ষমতা। যখন খাদ্য সংরক্ষণের কোন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, তখন উষ্ণ আবহাওয়ায় দ্রুত জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে খাবার নষ্ট হতো। মরিচের ব্যবহার খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এ কারণেই বেশিরভাগ মানুষ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য রান্নায় আদা, রসুন, মরিচসহ নানা রকম মসলা ব্যবহার করত।
ঝাল পরিমাপের পদ্ধতি:ঝাল পরিমাপের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো স্কোভিল পদ্ধতি। ১৯১২ সালে উইলবার স্কোভিল নামক রসায়নবিদ একটি মরিচের উত্তাপ বর্ণনা করার জন্য যে পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তা-ই স্কোভিল হিট ইউনিট হিসেবে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে মরিচের ঝাল আর সনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পানিতে চিনি মিশ্রিত করা হয়, এর মান যত বেশি হবে, বুঝে নিতে হবে মরিচের ঝালও তত বেশি। তুলনামূলক কম ঝালযুক্ত একটি লম্বা ডাচ চিলির ঝালের মাত্রা হয় মাত্র ৫০০ এসএইচইউ। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম ঝাল মরিচ, নাগার স্কোভিল স্কেলে ঝালের মাত্রা হয়ে থাকে ১.৩০ মিলিয়নেরও বেশি। তবে ঝালের দৌড়ে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ক্যারোলিনা রিপার, যার এসএইচইউ মাত্রা প্রায় ১.৬৪ মিলিয়ন।
দ্রুত ঝাল নিবারণের উপায়: ঝাল অনুভূত হওয়ার পর মানুষ ঠান্ডা পানি পান করে ঝাল নিবারণের চেষ্টা করে। বাস্তবে পানি কোন কাজেই আসে না। কারণ ক্যাপসাইসিন পানিতে অদ্রবণীয়। এটি দ্রবীভূত হয় দুধ, তেল কিংবা অ্যালকোহলে। তাই দ্রুত ঝাল নিবারণের জন্য দুধ পান করা সবচেয়ে কার্যকরী। দই অথবা অলিভ অয়েলও সাহায্য করবে।
পুষ্টিগুণ ও মানবদেহের উপকারিতা: ১. মরিচে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে, তবে ভিটামিন, খনিজ, আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর রয়েছে। যথেষ্ট ভিটামিন ও ফসফরাস থাকে। এর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং ম্যাংগানিজ শরীরের ফ্রি রেডিকেলজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে এবং ত্বকের টানটানভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে।
২. গবেষকদের ধারণা, মরিচ মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি, ক্ষুধা হ্রাস ও অতিরিক্ত চর্বি গলানোর মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. মরিচের ক্যাপসাইসিন একদিকে যেমন তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে আবার শরীরকে প্রশান্ত করার জন্য এন্ডরফিন নামক হরমোন উৎপন্ন করে। যা শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় প্রমাণিত, ক্যাপসাইসিনযুক্ত ক্রিম ৫৭ ভাগ আরথাইটিস জাতীয় ব্যথা উপশম করতে পারে। এছাড়াও এন্ডরফিন শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি আনে, ফুরফুরে মেজাজ নিশ্চিত করে। যদি মন খারাপ থাকে, তাহলে ঝাল খাবার খেয়ে নিন। সত্যিই ভালো অনুভব করবেন।
৪. সবুজ মরিচে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও দ্রুত ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাছাড়া ক্যাপসাইসিন নাসিকাগ্রন্থিতে রক্তপ্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ঠান্ডা ও সাইনাসজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে।
৫. মরিচের উপাদান খাদ্যদ্রব্যে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ইস্টের সংক্রমণ রোধ করে। একইসাথে অন্ত্রনালীর প্রদাহ ও পাকস্থলীর সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স ২০১৫ সালে প্রায় ৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্কের উপর গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, যারা সপ্তাহে ছয়-সাত দিন নিয়মিত মসলাযুক্ত ঝাল খাবার খেয়েছে; তারা ১৪ শতাংশ বেশি বেঁচেছে তাদের তুলনায়, যারা সপ্তাহে মাত্র একদিন মসলাযুক্ত ঝাল খাবার খেয়েছে। একইসাথে আরও জানা গেছে, যারা নিয়মিত সতেজ মরিচ খেয়েছে, তারা ক্যান্সার ও হৃদরোগে মারা যাননি।
৭. কাঁচা কিংবা লাল মরিচে কামড় দেওয়ার পর হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাসের বেগ বেড়ে যায়। ফলে রক্তনালীতে প্রচুর রক্ত প্রবেশ করতে পারে ও শরীরে শক্তি সঞ্চার করে। তবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। বেশি ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবারের ফলে গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ব্যথা, প্রদাহ, ফোলাভাব এবং সংবেদনশীল ত্বকে অসহ্য জ্বালাভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়মিত পরিমিত ঝাল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
মরিচের চাষ ও সম্ভাবনা: বাংলাদেশে মরিচ গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। কাঁচা ও শুকনা উভয় অবস্থায়ই প্রচুর চাহিদা। আমাদের দেশে সাধারণত মরিচ ছাড়া রান্নার কথা চিন্তাই করা যায় না। প্রায় সব অঞ্চলে কাঁচামরিচের চাষাবাদ হয়। তবে চরাঞ্চালে উৎপাদন বেশি হয়। বিধায় এসব এলাকায় মরিচ প্রধান কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচিত। তাছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মরিচের চাষ হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে মসলা নিয়ে কাজ করছে ‘মসলা গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯৫ সালে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রটি। এর মতে, বাংলাদেশে মসলার চাহিদা আছে বছরে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে মসলার উৎপাদন মাত্র ১৮ লাখ মেট্রিক টন। তাই দেশে মসলার ব্যাপক চাহিদা রয়েই গেছে। এ বিশাল চাহিদা পূরণ করার জন্য মরিচের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সু্যােগ রয়েছে। পরিসংখ্যানে জানা যায়, এদেশে রবি এবং খরিফ মৌসুমে মোট ১.০২ লাখ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়। তা থেকে শুকনো মরিচের উৎপাদন হয় প্রায় ১.০৩ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ১.২৭ টন। বাংলাদেশের অনেক কৃষক শুধু মরিচ উৎপাদন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামবাংলায় পান্তাভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। তরকারি ও ভর্তা-ভাজির এক অপরিহার্য উপকরণ কাঁচা অথবা শুকনো মরিচ। শুকনো মরিচ গুঁড়া মসলা, সস, চাটনি ও আচারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য মরিচের সস ও আচারের অনেক চাহিদা। তাছাড়া মরিচের অনেক ওষুধি গুণাগুণ আছে।
মরিচের অনেক স্থানীয় জাত আছে। উল্লেখযোগ্য জাত হলো- বালিজুরী, বোনা, বাইন, ধানি, সাইটা, সূর্যমুখী, পবা, হালদা, শিকারপুরী এবং পাটনাই। তবে মসলা গবেষণা কেন্দ্র বারি মরিচ-১ (বাংলা লংকা), বারি মরিচ-২ ও বারি মরিচ-৩ নামে উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি সারাবছর ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। কাঁচা মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। সাধারণত ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। তাই বাংলাদেশের আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। বীজ বপনের ৩ মাসের মধ্যেই মরিচ গাছে ফল আসে। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ১৫-২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১-দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। মরিচের বীজ সংগ্রহ করেও লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। পরিপক্ক এবং উজ্জ্বল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারলে প্রতি একরে ৩০-৪০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। যেহেতু দেশে প্যাকেটজাত মসলার বড় বাজার তৈরি হয়েছে। তাই মরিচ ব্যবসায়ীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত শুকনো মরিচ সংগ্রহ করে তা স্কয়ার, প্রাণ, এসিআইসহ ছোট-বড় অনেক কোম্পানিতে সরবরাহ করে নিশ্চিত মুনাফার অংশীদার হতে পারেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, ভালো মানের বীজ ও সার বিতরণ, এলাকাভিত্তিক প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং সেচের সুবিধা নিশ্চিত করার ফলে সম্প্রতি চরাঞ্চলে মরিচ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। লেখক: ইফতেখার হায়দার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com