২০১৪ এই মারাকানাতেই মেসির চোখের পানি মিশে গিয়েছিল ঘাসের সঙ্গে। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে গিয়েছিলেন, কিন্তু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। এরপর আরও দু’বার ফাইনালে উঠে হতাশায় মোড়াতে হয়েছিল মেসিকে। ক্ষোভে, দুঃখে একবার তো অবসরই ঘোষণা করে ফেলেছিলেন। অনেক আন্দোলন, অনুরোধ-উপরোধের পর ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু কোপা আমেরিকার দুটি ফাইনালে হারের পর আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন মেসি। অনেকেই ধরে নিয়েছিল, হয়তো আর ফিরবেন না।
কিন্তু দীর্ঘ সময় যে আর্জেন্টিনা কোনো শিরোপার নাগাল পাচ্ছিল না, নিজের ক্যারিয়ার এত কিছুতে রাঙানো, তবুও কোথায় যেন ফ্যাকাশে, কোথায় যেন রঙহীন। একটি আন্তর্জাতিক শিরোপাও নেই। অবশেষে মেসি ফিরে আসলেন। খেললেন এবারের কোপা আমেরিকা। শুধু খেলাই নয়, পুরো টুর্নামেন্টটাই নিজের করে নিলেন। অসাধারণ খেললেন প্রথম ম্যাচ থেকে। পুরো মেসিময় একটি টুর্নামেন্ট দেখলো ফুটবল বিশ্ব। অবশেষে এবারের কোপা আর হতাশ করেনি বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলারকে। মারাকানাও খালি হাতে ফিরিয়ে দিলো না ফুটবলের বরপুত্রকে। দু’হাত ভরে দিলেন। গোল্ডেন বল জিতলেন, গোল্ডেন বুট জিতলেন। অবশেষে প্রথমবারের মত কোপা আমেরিকার শিরোপাটাও হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ পেলেন লিওনেল মেসি। ২১তম মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার দুর্দান্ত এক গোলে নিশ্চিত হলো জয়। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম কোনো শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন মেসি।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতলেন, একই সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জিতলেন গোল্ডেন বুট। ৪টি গোল করার পাশাপাশি ৫টি অ্যাসিস্টও করেছেন মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মেসি জিতেছিলেন গোল্ডেন বল। কিন্তু সেবার তার মুখে কোনো হাসি ছিল না। ছিল পরাজয়ের গ্লানি।
তবে এবার গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুটের পুরস্কার হাতে নেয়ার সময় মেসির মুখে ছিল চওড়া হাসি। এবার যে আর হতাশায় মোড়ানো একটি দিন নয়, বরং সাফল্যে মোড়ানো একটি দিন পেয়ে গেলেন তারা! ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘ ২৮টি বছর পার হয়ে গেছে, আর্জেন্টিনার হাতে শিরোপা ওঠেনি। গত দেড়টি দশক ফুটবল বিশ্ব শাসন কর যাচ্ছেন। ২০০৭ সালেও মেসি খেলেছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনাল। সেবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছিলেন ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫, ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি। অবশেষে ১৪ বছর পর কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়ে আর বঞ্চিত থাকতে হয়নি মেসিকে। ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিজয়য়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন লিওনেল মেসি।