রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন

কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও বাসের দীর্ঘ সারি 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১

দৌলতদিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় ৫ শতাধিক গাড়ি
লকডাউন শিথিল হওয়ায় চলছে গণপরিবহন। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের কারণে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তার ওপর পদ্মায় তীব্র স্রোতে বিঘ্নিত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এসব কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে সৃষ্টি হয়েছে পণ্যবাহী, পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সরেজমিনে গিয়ে ঘাট এলাকায় দেখা যায়, অনেকদিন পর স্বরূপে ফিরেছে দৌলতদিয়া। এতদিন ঘাটের আগে নদী পারের অপেক্ষায় মহাসড়কে যানবাহন খুব একটা ছিল না। এখন প্রতিটি গাড়িকে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বোর্ড পর্যন্ত প্রায় ৩ কিমি রাস্তায় তিন শতাধিক পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। এ ছাড়া দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানজট এড়াতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত ৩ কিমি এলাকায় দুই শতাধিক অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখা হয়েছে। যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাতে সিরিয়াল অনুযায়ী পার করা হবে।
আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া গরুগুলো নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তীব্র রোদ ও গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের ভরসা কেবল হাত পাখা। প্রতিটি ট্রাকে ৮/১০ জন করে রাখাল গরুগুলোকে বাতাস করে চলেছে।
বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক আলিম সরদার জানান, ভোরে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফেরির নাগাল পাইনি। সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। প্রচ- গরমে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। ফেরির নাগাল পেতে আরও ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। ঘাটে পশুবাহী ট্রাক থাকায় বাড়তি চাপ রয়েছে। ফেরির সংখ্যা বাড়লে এই চাপ আর থাকবে না। সুলতানাপুর থেকে ট্রাকে গরু নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন মোহাম্মদ আলী শেখ। তিনি জানান, ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। এখন দৌলতদিয়া ঘাটে এসে আটকে পড়েছি। এই তীব্র গরমে গরুর স্ট্রোক করার আশঙ্কা থাকে। তাই একটু চিন্তায় আছি ঠিকমতো গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব কি না। কখন ফেরির নাগাল পাব তাও বলতে পারছি না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদ-উল আজহা উপলক্ষ্যে দু’একদিনের মধ্যে আরও দু’টি রোরো ফেরি এ নৌরুটের বহরে যুক্ত হবে। এ ছাড়া ৩ নং ফেরিঘাটটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখে মেরামত করা হচ্ছে।
কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও বাসের দীর্ঘ সারি: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গণপরিবহন চালু ও কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের চাপে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মা পারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে অসংখ্য যানবাহন। প্রচ- রোদ আর গরমে আটকে থাকা যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি ট্রাকে থাকা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর স্বরূপে ফিরেছে দৌলতদিয়া ঘাট। গত কয়েক মাস দৌলতদিয়া ঘাটে নদী পারের জন্য কোনো যানবাহন মহাসড়কে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা না গেলেও গতকাল সকাল থেকে সেই পুরনো দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। ফেরির জন্য প্রতিটি যানবাহনকে মহাসড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৪টার সময় দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে অন্তত চার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সিরিয়ালের দৈর্ঘ্য। আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রচ- গরমে কোরবানি উপলক্ষে ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসা গরুগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। রোদ ও গরমে বেশির ভাগ গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপারীদের ভরসা হাতপাখা। প্রতিটি ট্রাকে ৮-১০ জন রাখাল অবিরাম গরুগুলোকে বাতাস করে চলেছেন।
বাসচালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন পর পরিবহন চালানোর সুযোগ পেয়েছি। এতদিনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটের দুর্ভোগের চিত্র একই আছে। প্রায় ৩ ঘণ্টা আগে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসেছি। প্রচ- গরমে বাসের মধ্যেই বসে থাকতে হচ্ছে। যাত্রীরা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই। জানি না কখন ফেরির নাগাল পাব।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আব্দুল গাফ্ফার, খায়ের মোল্লা, নান্টু ব্যাপারীসহ অনেকেই জানান, লাখ লাখ টাকার গরু নিয়ে তারা বেশি দামে বেচার আশায় ঢাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। এ গরুগুলো তো খুব বেশি কষ্টসহিষ্ণু না। ফলে গরুগুলো প্রচ- গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ কারণে যদি একটি গরুর কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ওই ব্যবসায়ীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। বিআইডব্লিউটিসির স্থানীয় সূত্র জানায়, একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক যানবাহন নদী পারাপার হতে আসায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সিরিয়াল পড়েছে। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন ঘাট এলাকায় যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
টাঙ্গাইলে ১৩ কিমি অংশে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি: টাঙ্গাইলে মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার (১৬ জুলাই) ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থেকে কালিহাতীর পুংলি পর্যন্ত সড়কের ১৩ কিলোমিটার অংশে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে।
জানা গেছে, দেশে লকডাউন শিথিল হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বেড়ে যায়। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মহাসড়কে দ্বিগুণ পরিবহন চলাচল করায় শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে মহাসড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। এতে কোথাও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উত্তরবঙ্গগামী লেনে পরিবহন কম থাকলেও ভোর থেকে ঢাকাগামী লেনে পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের নলকা ব্রিজ ও পশ্চিমপাড় অংশে মহাসড়কের কাজ চলামান থাকায় সেখানকার পরিবহনের চাপ টাঙ্গাইল অংশে গিয়ে ঠেকে। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ পরিবহন চলাচল করছে। এতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামের মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com