সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

শাটডাউন বাড়ানোর সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান শাটডাউনের সময়সীমা আবারো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শাটডাউনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার সকালে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার খুরশীদ আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ক্যাবিনেটে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় কী, এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই তো আমরা চলমান লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করেছিলাম। তবে এ বিষয়ে এখনো সরকার সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কোরবানি ঈদের পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় শাটডাউন। কঠোর এ বিধিনিষেধ চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। ঈদের সময়টা বাদে চলতি মাসে চলা শাটডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে আসা বারণ। রিকশা ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। মানুষের অযাচিত চলাচল ঠেকাতে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়কে পড়তে হচ্ছে পুলিশি তল্লাশির মুখে। শাটডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে আছে বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
কঠোর বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী ৫ আগস্টের পর কঠোর বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম। গতকাল শুক্রবার তিনি ফোনে এ কথা জানিয়েছেন। খুরশীদ আলম বলেন, ‘বিধিনিষেধ বাড়ানোর কথা আমরা বলেছি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি বিধিনিষেধ কন্টিনিউ করতে। কারণ আমাদের যেকোনো ভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সব খুলে দেয়া যাবে না। সব খুলে দিলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। আমরা শুনেছি ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেয়ার জন্য জনপ্রশাসনে আবেদন করেছেন। কিন্তু সব খুলে দিয়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে তো হাসপাতালে জায়গা হবে না।’ সরকারের গণটিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা তো নিয়ে রাখতে হয়। কোনো কিছুই ফিক্সড (নির্ধারিত) নয়। ইপিআই যেভাবে অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে, এটিও সেভাবে করবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানাবেন।’
ঈদুল আজহার পর ২৩ জুলাই থেকে এ দফার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এবারের বিধিনিষেধে শিল্পকারখানাও বন্ধ রয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আসার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সাধারণত বিধিনিষেধ দেয়ার পর করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসলেও এবার তেমনটি দেখা যায়নি।
বিধিনিষেধে জরিমানা গুনেও রাস্তায় নামছে মানুষ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে বিনা প্রয়োজনে মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হলেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অনেককে মামলা দিয়ে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তবে চেকপোস্টে জরিমানা দিয়ে ফের সড়কে নামছে মানুষ। গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই) কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টমদিনে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সড়কে অন্য দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ চেকপোস্টই ছিল ফাঁকা। এদিন, দুপুর ১টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় দুইজনকে মামলা দেয় মিরপুর-১০ নম্বরের চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ। তাদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিনিষেধ প্রতিপালনে জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো যানবাহন সড়কে না চালানোর নির্দশনা থাকলেও অনেকেই ব্যক্তিগত যান নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদের মামলা ও জরিমানা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ফের সড়কে নামছেন।’ এদিকে, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকলেও নেই পুলিশ। মিরপুর-১০ নম্বরসহ বিভিন্ন চেকপোস্টে ব্যক্তিগত গাড়ি দেখলেই গতিরোধ করা হচ্ছে। চেকপোস্ট ট্রাফিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জানতে চাচ্ছেন—কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাবেন?
সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের বাসায় পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া মিরপুর-১ নম্বর ও গাবতলী চেকপোস্ট পুলিশের তল্লাশি চোখে পড়েছে। করোনা প্রতিরোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ বহাল থাকবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।
হেঁটে-রিকশা-ভ্যানে এখনো ঢাকায় ফিরছে মানুষ: করোনা প্রতিরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকালে গাবতলী ও আমিনবাজার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি এড়িয়ে পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে ঢুকছে মানুষ। চাকরি, টিকা নেয়া কিংবা করোনা টেস্ট করতে ঢাকায় আসা এসব মানুষকে গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ গুন বেশি ভাড়া। পরিবর্তন করতে হচ্ছে একাধিক যান। ঈদুল আজহার এক সপ্তাহের বেশি সময় পরে এসব মানুষ ঢাকায় ফিরে পড়ছেন আরেক বিড়ম্বনায়, গণপরিবহন না থাকায় রিকশা হয়ে উঠেছে মূল পরিবহন। ইচ্ছামতো ভাড়া হাকছেন চালকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ঢাকা প্রবেশ পথ আমিন বাজার ও গাবতলীতে পুলিশের কঠোর নজরদারি আছে। গাড়ি ও মোটরসাইকেল তল্লাশি সবই চলছে। কিন্তু চেকপোস্টের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে আসছে দূর-দুরান্ত থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা। প্রবাসী শ্রমিক নাজির পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, রিকশায় সাভার থেকে হেমায়েতপুর আসলাম ৩০ টাকা দিয়ে। পরে আরেক রিকশায় আমিনবাজার আসলাম ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এখন হাতিরঝিল যাব রিকশায় সাড়ে ৩০০ টাকা ভাড়া চাইছে। ঢাকায় আসার কারণ যানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল আমার ফ্লাইট। এজন্য ঢাকায় আসছি। সকাল ৬টায় নাটোর থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ১২টায় আমিন বাজার ব্রিজে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইফুল ইসলাম। আমিন বাজার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের তিনি বলেন, অক্সিজেন কোম্পানিতে চাকরি করি। অফিস থেকে ঢাকায় এসে কাজে যোগদান করতে বলেছে। ঢাকায় আসতে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
রাজীব নামের এক গার্মেন্টকর্মী বলেন, অফিস থেকে বলছে সব কিছু খুলে দেবে তাই মানিকগঞ্জ থেকে চলে আসতে হলো। তিনি বলেন, অন্য সময় আসতে ১৫০ টাকার মতো খরচ হয়, তবে এবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে ৫০০ টাকার লাগল। আমিন বাজার ব্রিজের গাবতলী পয়েন্টে তল্লাশি করত দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। যারা কারণ দেখাতে পারছে তাদের যেমন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তেমনি অকারণে বের হলে যানবাহনে গুনতে হচ্ছে মামলা। আর ব্রিজের মাথায় রিকশা-ভ্যানকে যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। আমিন বাজার ব্রিজে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. বায়োজিদ মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে বিধি নিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেকেই ফিরছেন ঢাকায়। তবে যারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারছেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। সকাল থেকে একজনকে মামলা দেয়া হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com