সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

প্লাবিত সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল, ক্ষতিগ্রস্ত ২০ হাজার মাছের ঘের 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

খুলনায় ডুবে গেছে ৭৬৬৪ হেক্টর বীজতলা ও সবজি 

টানা চার দিনের বৃষ্টিতে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার সাত হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি ডুবে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চার হাজার ৮০০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা। ভারীবর্ষণে ভেসে গেছে সাতক্ষীরার রোপা আমন, বীজতলা, পুকুর ও মাছের ঘের। পানিতে তলিয়ে গেছে ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। মৎসচাষীদের দাবি, অতিবৃষ্টিতে শুধুমাত্র মাছের ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার মতো। সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলীনুর খান বাবুল বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার যে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে তাদের চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। পানি বের হওয়ার সুযোগ নেই। সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির নেতা আনিসুর রহিম বলেন, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তৃীর্ণ এলাকা।
এদিকে সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপন করা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও তেমন পানি টানতে পারছে না।
জানা গেছে, অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, কচুয়ার বিল, চেলারবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিল, হাজিখালি বিল, আমোদখালি বিল, বল্লীর বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ২০টি বিল ডুবে গেছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে নিষ্কাষিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার ভেতরে ঢুকছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ভারীবর্ষণে জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে বলে জানান কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম।
জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আমপানে সাতক্ষীরায় মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি টাকা। ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাছের ক্ষতি হয় ১৬ কোটি টাকা। সবশেষ বৃহস্পতিবার ব্যাপক বর্ষণে ৫৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আলাউল ইসলাম জানান, বছরে তিন থেকে চারবার আমাদের মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। ৫০ বিঘার একটি ঘেরে আমপানে আমার ক্ষতি হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। ইয়াসে ক্ষতি ছিল ৫ লাখ টাকা। আর এবার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ঘের ব্যবসা আগামীতে বাদ দেবেন বলে জানান আলাউল ইসলাম।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৯ হাজার ৪৫৯টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।
খুলনায় ডুবে গেছে ৭৬৬৪ হেক্টর বীজতলা ও সবজি: টানা চার দিনের বৃষ্টিতে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার সাত হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি ডুবে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চার হাজার ৮০০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা। গতকাল শনিবার (৩১ জুলােই) খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে খুলনায় এক হাজার ৮১৫ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা ডুবে গেছে। এর মধ্যে কয়রায় এক হাজার ১৫ হেক্টর জমি রয়েছে। কয়রার সুইস গেটের কপাট খুলে যাওয়ায় পানি আটকানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কয়রার বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দাকোপের ৭০০ হেক্টর জমির বীজতলা ডুবে গেছে।
তিনি আরও জানান, খুলনায় এ বছর পাঁচ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি। বৃষ্টির কারণে ৩১৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি জমি ডুবে গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস থাকায় আউশ ধানের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার এক হাজার ৭০০ হেক্টর আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পাশাপাশি ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন জমি ও ৫০০ হেক্টর সবজি ডুবে গেছে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাটে এক হাজার ২৮৭ হেক্টর জমির আমন বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ জেলায় পাঁচ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছিল। রোপা আমনের ১৫ হেক্টর জমি ডুবে গেছে। তিনি আরও জানান, জেলায় ২৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়। আউশ ধানের ৯৫০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত। আউশ চাষ হয় পাঁচ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমিতে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হয় ছয় হাজার ৩০৫ হেক্টর। এর মধ্যে ২০৯ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। জেলার মধ্যে শরণখোলায় সবচেয়ে বেশি জমি ডুবে গেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com