শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

সব হারিয়ে হিলির মজিদ এখন দিশেহারা

মোসলেম উদ্দিন (হিলি) দিনাজপুর :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১

একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না

ট্রেনে কাটা পড়ে হাত-পা এবং ভিটেবাড়ি সব হারিয়ে এখন দিশেহারা দিনাজপুরের হিলির বড়চড়া গ্রামের এক যুবক আব্দুল মজিদ(৩৫)। সে ঐগ্রামের ছয়মুদ্দিনের ছেলে। সব হারিয়ে বাঁচার তাগিদে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মজিদ আজ শ্বশুরবাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমান শ্বশুরদেরও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। প্রায় ৮ বছর আগে মজিদ জয়পুরহাটের পুরানাপৈল নামক স্থানে একটি মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর সেই ট্রেন দুর্ঘটনায় আব্দুল মজিদ ট্রেনের পড়ে বা দিকের পা ও হাত পুরোটা কাটা পড়ে। তবে বেঁচে যায় তার জীবন। কিন্তু কাটা পা আর হাত নিয়ে তার স্ত্রী এবং বাবা-মা তাকে দীর্ঘদিন রংপুর, দিনাজপুরে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। এই চিকিৎসায় বাবা-মায়ের আর নিজের জমানো সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। আব্দুল মজিদ একজন সুদর্শন, সুস্থ স্ববল শরীরের অধিকারী ছিলেন। সুঠাম দেহের মানুষ, সংসার চালানোর জন্য সব ধরনের কঠিন কাজ করতেন তিনি। তার এক ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে চার জনের সংসার। পা-হাত হারিয়ে কোন কাজ করতে পারেন না সে, নেই তার মাথা গুজা ঠাঁই। নিরুপায় হয়ে বছর পাঁচেক আগে পারিজমায় হিলি পৌর এলাকার ডাঙ্গাপাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে, শ্বশুরদেরও তেমন থাকার বেশি জায়গা নেই। জামাই মেয়ের আর নাতি-নাতনির মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের থাকা কুড়ে ঘরটিও তাদের ছেড়ে দেন। সংসারের চাহিদা মেটাতে আজ তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। পারছেন না সন্তানদের চাওয়া-পাওয়া পুরোন করতে। জীবন যুদ্ধে আব্দুল মজিদ এখন একজন পরাজিত সৈনিক। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে একটা পঙ্গু ভাতার কার্ড। তাতে তো তার সংসার চলে না। স্ত্রী সন্তানদের চাহিদা মেটাতে একটা ব্যবসা করবে, তার মুলধন জোগার করার ক্ষমতা তার নেই। পরের বাড়িতে আর কতদিন? নিজের একটা বাড়ি থাকলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক শান্তিতে থাকতে পারতো এই অসহায় মানুষটি। ভারি ওজনের কাজ করার ক্ষমতা নেই তার, কেননা শরীরের একটা সাইট আজ অকেজো। এক পা আর এক হাত দিয়ে কি আর সব কাজ করা যায়? অবশিষ্ট একটা পা আর এক হাত দুইটি স্কেসের উপর ভর করে তাকে চলতে হয় কোন রকম। একসময় মজিদ রিকশা আর ভ্যান চালাতো, তাতে সংসারও ভাল চলতো। আজ তা চলানোর নেই ক্ষমতা, তাই আজও রাস্তায় দাড়িয়ে অন্যদের রিকশা আর ভ্যান চালানো দেখে তিনি। বর্তমান পঙ্গু মজিদের এমন অবস্থা যে একবেলা খাবার ছেলে-মেয়েদের খাওয়াবে, সেই খাবারটুকু তার সংসারে নেই। হাকিমপুর উপজেলার ১ নং খট্টা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে মজিদের বাড়ি, তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। ট্রেন দুর্ঘটনায় তার এক হাত এক পা কাটা পড়ে। আমার ইউনিয়ন থেকে তাকে পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এখন তার কোন ঘরবাড়ি নেই, অচিরেই তাকে আমি একটা সরকারি ঘর প্রদান করবো। হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, বর্তমান প্রতিবন্ধী আব্দুল মজিদ আমার পৌর এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ি থাকে। সেহেতু তাকে আমি আমার পৌরসভার সকল সুযোগ সুবিধা দিবো। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ নুর-এ আলম বলেন, আব্দুল মজিদকে পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তবে বর্তমান মজিদ যে ঘরে বসবাস করে, সে যদি চাই তাহলে তার ঘরটি সংস্কারের ব্যবস্থা করে দিবো এবং মজিদকে খাদ্য সামগ্রীও দেওয়া হবে। এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, উপজেলার ১ নং খট্টা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন, পৌরসভা, ইউএনও এবং আমার পক্ষ থেকে অসহায় পঙ্গু আব্দুল মজিদকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ঘর যদি থেকে থাকে তাহলে তাকে আমরা তাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com