সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি-বন্যা, উত্তরাঞ্চলে পানির অভাবে ধান রোপণ ব্যাহত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

ঋতু পরিক্রমায় এখন বর্ষাকাল। পানিতে ভাসছে যখন দেশের দক্ষিণাঞ্চল, তখন একেবারে ভিন্নচিত্র উত্তরাঞ্চলে। শ্রাবণ মাসেও তেমন বৃষ্টি নেই রংপুরে। কখনও টিপটিপ করে, কখনও একপশলা বৃষ্টি হচ্ছে। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমি শুকিয়ে মাটি ফেটে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা বৃষ্টির পানিনির্ভর ফসল রোপা আমন রোপণ করতে পারছে না। বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চললেও গত বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। টানা রোদের তাপে ধানের লাগানো চারা পুড়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে বেশিরভাগ জমি অনাবাদী পড়ে আছে। অনেক কৃষক সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করলেও প্রান্তিক কৃষকেরা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। অথচ দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গত দুই মাস বিভিন্ন সময়ে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। খুলনা-বাগেরহাটে পানিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং শত শত মাছের ঘের ভেসে গেছে। রংপুরের কৃষকরা বলছেন, শ্যালোমেশিনে টানা ৫/৬ ঘণ্টা পানি সেচ দিয়ে এক বিঘার এক খ- জমি হাল-চাষ করে চারা রোপণের উপযোগী করা যায়। এতে সেচের জন্য প্রতি ঘণ্টায় গুনতে হয় একশত টাকা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রংপুর বিভাগে প্রায় ৬ লাখ ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টরে চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। কিন্তু পানির অভাবে জমি আবাদ করা যাচ্ছে না, তাহলে লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে কীভাবে?
সরেজমিন রংপুরের সদর উপজেলা, পীরগাছা উপজেলার বেশকিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আমন চারা রোপণের সময় ফুরিয়ে এলেও পানির অভাবে চারা লাগাতে পারেনি অধিকাংশ কৃষক। অনেকে আবার সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে রোপণকৃত চারা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে ঠিকমত সেচও দিতে পারছে না কৃষক। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ছিদাম গ্রামের জিল্লুর রহমান, ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন জানান, করোনাকালীন সময়ে আয়ের উৎস হারিয়েছেন তারা। আমন রোপণের সময় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে তাদের। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে আমন রোপণ করতে না পারায় সেই পথও বন্ধ। অন্যদিকে, বৃষ্টির অভাবে প্রধান ফসলের চাষ ব্যাহত হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক কৃষক। সদর উপজেলার কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির অভাবে খুব সমস্যায় আছি, শ্যালো দিয়ে আমন ধানের চারা লাগানোর পর পানির অভাবে তা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। সকালে সেচ দিলে বিকেলে পানি থাকে না।’
একই কথা জানালেন গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ির গ্রামের শহিদুল ইসলাম, হাসেন আলীসহ কয়েকজন কৃষক। তারা বলছেন, হঠাৎ করে একটু বৃষ্টির দেখা দিলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে জমি ভিজছে না। অন্যদিকে আমনের চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে আমন চাষ করছেন তারা। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তারপরও বন্যা ও খরার ঝুঁকি তো আছেই।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবর রহমান বলেন, এই মৌসুমে কমপক্ষে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন হয় আমনের চারা রোপণ করতে। কিন্তু গেল এক মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২০০ মিলিমিটারের মতো। আর সেই কারণে খালি পড়ে আছে অনেক জমি। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির সময় এখনও রয়েছে। তবে কৃষকদের উঁচু জমিতে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করার পরামর্শ দেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, এটা ঠিক, এতে তাদের একটু কষ্ট হবে। বৃষ্টি হলে তাদের জন্য কাজটি করা অনেক সহজ হতো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com