রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন

৭ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ৫ কেজি চাল ক্রয়

এম কে মনির সীতাকুণ্ড
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

সীতাকুণ্ডে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) এর ন্যার্য মূল্যের ৫ কেজি চাল কিনতে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে ৬-৭ ঘন্টা। সকাল ৭ টা থেকে ক্রেতারা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বিকাল তিনটায়। এমনটা জানিয়েছেন লাইনে অপেক্ষমান ব্যক্তিরা। তারা জানান, ভোর থেকে মাত্র ৫ কেজি চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ৫ কেজি চাল কিনতে দিন পার করতে হচ্ছে। নাওয়া-খাওয়া, গোসল ত্যাগ করে চাল কিনতে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। লাইনে অপেক্ষমান ক্রেতাদের অভিযোগ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে চাল দিতে দেরি করছেন ডিলাররা। কখনো নাস্তা, কখনো ভাত, আবার কখনো চাল পুরিয়ে যাওয়ার ইস্যুতে লোকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে চাল বিক্রি বন্ধ রাখছে ডিলাররা। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সরেজমিনে ৩ আগষ্ট উপজেলা যুব চত্বর বিক্রয় কেন্দ্রে দুপুর ৩ টায় ডিলার বোরহানের বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ দেখা যায়। এসময় দীর্ঘ লাইনে পুরুষ ও মহিলাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত এ কেন্দ্রে চাল কিনতে আসা পপি আক্তার বলেন, সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন বাজে ৩ টা। মাত্র চাল কিনলাম। গরমে হাঁফিয়ে ওঠেছি। ৫ কেজি চাল কিনতে এতো কষ্ট জীবনেও করিনি। কথা হয় রিকশা চালক আলমগীরের সাথে। তিনি বলেন, সেই ভোরে আমি লাইনে দাঁড়িয়েছি। খাওয়া-দাওয়া না করে লাইনে দাঁড়িনো কত কষ্ট আমরা গরীবরাই বুঝব। পয়সাওয়ালারা বুঝবে না। এতো কষ্ট মাত্র ৫ কেজি চাল কিনতে হচ্ছে। ভাত যে কত কঠিন জিনিস হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি। করোনাকালে কাজ-কাম নাই। আয় রোজগার বন্ধ। কেমনে খামু আমরা। জীবন যে আর চলে না। একই কথা বলেন, দিনমজুর হানিফ। তিনি বলেন, আমার পরিবার ৭ সদস্যের। ৫ কেজি চাল নিলে দু’ দিন চলে। একদিন পর আবার আসতে হয়। চাল কেনাই এখন কাজ। ১৫০ টাকা ধার করে এনেছি। এখন পর্যন্ত ঋণ হয়েছে ৫ হাজার। ৫ কেজি চাল কিনতে এত পরিশ্রম করতে হলে কিভাবে চলব? গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, আমাদের কেন্দ্র বাড়ি থেকে দূরে। পশ্চিম আমিরাবাদ থেকে চাল কিনতে এসেছি। একেতো দূরের পথ, আবার দীর্ঘ অপেক্ষা। এসময় লাইনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন, কি আর করা। তারা যতক্ষণে দেয় আরকি। আমাদের কি কিছু করার আছে। ৭ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ালাম, এখনো চাল পায়নি। আবার কোথাও চাল ও আটা পৃথকভাবে সকালে ও বিকালে দেয়ার কথা জানা গেছে। এতে অনেকেই পড়ছেন বিপাকে। আবার অনেকে চাল কিনেই বাড়ি ফিরছেন। তবে ডিলাররা বলছেন মানুষের চাপ বেশি হওয়ায় চাল দিতে দেরি হচ্ছে। চাল কিনতে উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকালও আমরা দুপুরের খাওয়ার খায়নি। বন্ধ সময়ে আমরা খেতে গিয়েছিলাম। আমরা সবাইকে আন্তরিকভাবে চাল দিচ্ছি। জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ওপেন মার্কেটে (ওএমএস) ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রয়। প্রতিদিন একজন ক্রেতা ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল ও ১৮ টাকা দরে ৫ কেজি আটা ক্রয় করতে পারবে পৌরসভার ৪ টি ডিলার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে নিজ ওয়ার্ডের ডিলার দোকানে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভায় মোট ৪ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন একজন ডিলার ১৫’শ কেজি চাল ও ১ হাজার কেজি আটা বিক্রয় করতে পারবে। এ বিক্রয় কার্যক্রম ৭ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে। এবারের কার্যক্রমে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ ইদিলপুর ডিলার, ৬ নং ওয়ার্ডে যুব চত্বর ডিলার, কলেজ রোড়, ও পন্থিছিলা ডিলার রয়েছে। এসব ডিলার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে পাশ্ববর্তী ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চাল ক্রয় করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ডিলার কেন্দ্র ও ওয়ার্ডের নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে যুব চত্বর ডিলার বিক্রয় কেন্দ্রের মনিটরিং অফিসার ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার শাহ আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। কোন অনিয়ম বা হয়রানি হলে ব্যবস্থা নিব। বিষয়গুলো আমি এখনি দেখছি। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার সামশুন্নাহার স্বর্না একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি তাদের জনবল বাড়াতে বলেছি। আসলে ক্রেতাদের লাইন দীর্ঘ। তাই এমন হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন মনিটরিং করছি। এক প্রশ্নের জবাবে সামশুন্নাহার স্বর্না বলেন, দিনের লক্ষ্যমাত্রার চাল ও আটা ডিলাররা বিক্রি করছে কিনা তা আমাদের মনিটরিং অফিসাররা দেখভাল করছেন। এ বিক্রয় কার্যক্রম ৭ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com