ঢাকার আড়ৎদার হালিমের কারণে পথে বসেছে যশোরাঞ্চলের কমপক্ষে ১০ জন চামড়া ব্যবসায়ী। বর্তমানে তারা পুঁজি হারিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব। গত চার বছর ধরে লালবাগ পোস্তগোলার হালিম এসব ব্যবসায়ীর ছয় কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। এ কারণে পুঁজি হারানো চামড়া ব্যবসায়ীরা এক প্রকার ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। অনেকের দিনের পর দিন ব্যাংকের সুদ গুণতে গিয়ে জায়গা জমি হারানোর অবস্থায় পড়েছেন। ঢাকার লালবাগ পোস্তগোলার আড়ৎদার হালিম দীর্ঘদিন ধরে যশোরের রাজারহাট থেকে চামড়া কিনতেন। এখানকার ব্যবসায়ীরা বাকিতে তার কাছে চামড়া বিক্রি করতেন। বিগত চার বছর আগে যশোরাঞ্চলের দশজনেরও বেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি কমপক্ষে ছয় কোটি টাকার চামড়া বাকিতে কেনেন। এরপর আর তাদের পাওনা টাকা দেননি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, যশোরের নাজির হোসেন, আব্দুল ওহাব, মোস্তাক, জিল্লু, গিয়াস, মালেক, লিটন, হাসানুজ্জামান হাসু, আলাউদ্দিন মুকুল, পারভেজ ও হাশেম আড়ৎদার হালিমের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা পান। গোপালপুরের নাজির হোসেন জানিয়েছেন তিনি একাই ২ কোটি ৪ লাখ টাকা পাবেন। এর বাইরে রূপদিয়ার আব্দুল ওহাব ৬০ লাখ, হাশেম ৬০ লাখ, হাসানুজ্জামান হাসু ১১ লাখ, আলাউদ্দিন মুকুল ৭ লাখ ও পারভেজ ৬ লাখ টাকা পাবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া, মোস্তাক, জিল্লু, গিয়াস, মালেক এবং লিটনও বিপুল অঙ্কের টাকা পাবেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। নাজির হোসেন বলেন, গত চার বছরে তাকে ব্যাংকের দুই কোটি টাকার সুদ বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা দিতে হয়েছে। বিপুল অঙ্কের টাকা চার বছর ধরে আটকে থাকায় তিনি পথে বসেছেন বলে জানিয়েছেন। তার মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন নাজির হোসেন। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার বছর ধরে আড়ৎদার হালিম রাজারহাটে আসছেন না। তিনি এখান থেকে চামড়া কেনা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন। পাওনাদাররা তার কাছে টাকা চাইলে কোম্পানি থেকে পাচ্ছেন না বলে জানিয়ে আসছেন। কেবলমাত্র একজন আড়ৎদারের কারণে যশোরের অনেক প্রতিষ্ঠিত চামড়া ব্যবসায়ীর আজ দৈনদশা। আড়ৎদার হালিমের কাছে কেবল যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা টাকা পাবেন না। খুলনা, সাতক্ষীরা, মাগুরাসহ আশপাশের অনেক ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা পাবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। পাওনা টাকার দুশ্চিন্তায় ইতিমধ্যে খুলনার অন্যতম প্রধান চামড়া ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্ট্রোক করেছেন বলে যশোরের একজন চামড়া ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। যশোরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার রাজারহাটের জৌলুস কমেছে বলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। কমেছে চামড়া কেনার প্রতিযোগিতাও। ফলে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে জানতে আড়ৎদার হালিমকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।