পানগুছি নদীর ভাঙ্গনে দিন দিন বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের মানচিত্র। প্রতিদিন ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। বসতবাড়িসহ বহু প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ঘাট চলে গেছে নদীগর্ভে। গত ৫০বছরে পানগুছি নদীর আয়তন তিনগুন বেড়েছে। এখন নদীট প্রশস্ত এক কিলোমিটারের বেশী। সাড়ে ৩ লাখ লোকের বসতি এখানে। দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এই নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পোল্ডার নং ৩৫/২। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও সেই স্বপ্নের বেড়িবাঁধের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসি আন্দোলন, মানববন্ধন করেছেন। মন্ত্রী, এমপি ও পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন বহুবার। বেড়িবাঁধের দাবিতে ডিও লেটার দিয়েছেন এমপি কিন্তু কাজের কিছুই হয়নি। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ও টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে। কয়েক বছর ধরে পানগুছি নদীর ভাঙ্গনে ওই ৩টি গ্রামের কমপক্ষে ৪শ’ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। গাবতলা গ্রামের ২৫একর জমি ধসে গেছে নদীতে। গত ৪০ বছরে শুধু উপজেলা সদর থেকে নদীগর্ভে চলে গেছে, খাদ্যগুদাম, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস, টেলিফোন অফিস, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এসিলাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবন, ডাকবাংলো, বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ কোয়াটার, আনছার ময়দান, বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, সার্বজনীন হরিসভা মন্দির, শ্মশান ঘাটসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা ঘাট। বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গাবতলা, কাঠালতলা, বারইখালী, ফেরিঘাট, কুমারখালী, সন্নাসী, শ্রেণিখালী, ঘষিয়াখালী, সোনাখালী, ফুলহাতাসহ ২০টি গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিডর, আইলা,ইয়াসের পর কোন ভেঙে যাওয়া রক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সংদস্য সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি গাবতলা হতে পশুরবুনিয়া অভিমুখে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ডিও লেটার দেন। ডিও লেটারে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার পূর্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষে পোল্ডার নং-৩৫/২ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল যা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি’। ডিও লেটারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম গেল বছরের ১২ জুলাই পাউবো মহাপরিচলকেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আজঅবধি কার্যকরি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ২০২১সালের মে মাসে স্থানীয় সাংসদ এ্যাডঃ আমিরুল আলম মিলন ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।ওই সময় তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া ও পঞ্চকরণ ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে নদী শাসন কার্যক্রম শুরু হবে। রাস্তা-ঘাট পুনঃনির্মাণ করা হবে। সন্ন্যাসী থেকে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। পরিদর্শনকালে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার নারী পুরুষ সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলনকে শ্লোগান দেয়। এলাকাবাসী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ’। এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহামুদুন্নবী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. তাজিনুর রহমান পলাশ, পৌর যুবলীগ আহবায়ক আহবায়ক আসাদুজ্জামান বিপুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তার সফরসঙ্গী ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, কয়েকশ’ পরিবার তাদের মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে। ধসে গেছে ৫০একর জমি। পৌর শহর রক্ষার্থে এ পর্যন্ত মাত্র ১ কিলোমিটার পায়লিং হয়েছে। খর¯্রােতা পানগুছির ভাঙ্গন থেকে মোরেলগঞ্জ পৌর শহরসহ ২০টি গ্রাম রক্ষা করতে প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চলছে শুধু পরিদর্শন ও চিঠি চালাচালি। কাজের কিছু হয়নি। এ বিষয়ে পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, বাঁধ নির্মানের বিষয়টি সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।