আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবসে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠিকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও করোনা সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। ‘চা শ্রমিকদের করোনা সুরক্ষা টিম’ এর আয়োজনে ৯ আগষ্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগান হাসপাতালের সম্মুখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ২৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক অধিকারকর্মী, সংগঠক ও সমম্বয়ক মোহন রবিদাস, বাবুল মাদ্রাজী, নিলু গোয়ালা প্রমুখ। চা শ্রমিক জনগোষ্ঠিকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও করোনা সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাদে সমতলের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীরই বসবাস রয়েছে চা বাগানে। চা বাগানে গারো, ত্রিপুরী, সাওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, বাউরী, লোহার, রিবদাস, তেলেগু, ভূমিজ, কানু, বীন, ছত্রী, সবর, বাক্তিসহ প্রায় ৯৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। যাদের প্রত্যেকেরই ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণ-পার্বণ, ধর্মীয় রীতিনীতি, পূজা-উৎসব, বিবাহ প্রথা, সমাজ কাঠামো দেশের মূল ধারার জনগোষ্ঠী থেকে ভিন্ন। এদের কেউ প্রাক দ্রাবিড়ীয় ,কেউ আদি অস্ট্রালয়েড কেউবা আবার মঙ্গোলীয় আদিবাসীর অন্তর্ভুক্ত। তবে সরকারিভাবে চা বাগানের প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে গ্যাজেটভুক্ত করা হয়নি। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের ভাষা-সংস্কৃতি বিকাশের কোন প্রকার সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তারা আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে চা শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোন সরকারি-বেসরকারি কিংবা চা বাগান কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। চা বাগানে ন্যুনতম স্বাস্থ্যবিধি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। করোনা মহামারিকালে লকডাউনে সবকিছু বন্ধ রাখা হলেও ঝুঁকির মাঝে চালু রাখা হয় চা বাগানগুলো। রীতিমত করোনা ঝুঁকির মাঝে চা শ্রমিকরা বিশেষ কওে নারী চা শ্রমিকরা কাজ করেই চলেছেন। ঘন বসতিপূর্ণভাবে বসবাসরত সকল চা শ্রমিকদের জন্য অন্তত টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে চা শ্রমিকরা কিছুটা হলেও সু-রক্ষিত থাকতো। এ সময়ে তারা চা শ্রমিকদের পক্ষে ২৮ দফা দাবি উপস্থাপন করে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-চা বাগানে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীকে আবিবাসীর স্বীকৃতি, ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশে চা বাগান অধ্যূষিত উপজেলায় ১টি করে সংস্কৃতি ইস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, অবিলম্বে সকল চা শ্রমিকদের কোভিড টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত, করোনা আক্রান্ত চা শ্রমিকদের ১৪ দিনের মজুরিসহ প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত, করোনাকারীন ঝুঁকি ভাতার প্রচলন করা, সকাল চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, নারী চা শ্রমিকদের (নির্দিষ্ট বয়সের) বিনামুল্যে স্যানিটারী ন্যাপকিন/প্যাড প্রদান, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা, জাতীয় বাজেটে চা শ্রমিকদের জন্য পৃথক বরাদ্ধ নিশ্চিত, ভূমি অধিকার, শ্রম আইনের স্বার্থবিরোধী সকল ধারা সংশোধন, উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরিতে চা শ্রমিক সন্তানদের কোটা সুবিধা চালু, উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান, চা বাগানের সেকশনে (প্লান্টেশন এলাকায়) বিশুদ্ধ পানীর ব্যবস্থাসহ গণ-শৌচাগার ও বিশ্রামাগার করা, চা বাগানে কীটনাশক প্রয়োগকারী শ্রমিকদের ঝুঁকিভাতা ও সু-রক্ষা সামগ্রী প্রদান, স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় শ্রমিকদের সমানহারে মজুরি প্রদান, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাবার চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা বন্ধ করা, চা বাগানে সকল প্রকার মাদক দ্রব্য সেবন ও বিক্রয় বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা, নামমাত্র রেশনের পরিবর্তে শ্রমিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য সামগ্রী প্রদানসহ অন্যান্য দাবিদাওয়া।