বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে এক শিশুকে প্রকাশ্যে বাজারে মারধর করে তাঁর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় সর্বত্র এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গৈলা বাজারে শনিবার বিকেলে। সন্ধ্যায় ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই বাজারসহ উপজেলার সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন লোকজন, নির্যাতিত শিশু ও তাঁর মায়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক লাল মিয়া সরদারের শিশু পুত্র সজীব(১১)কে গৈলা বাজারের অলি টেলিকম থেকে একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় স্থানীয় শাহীন খানের ছেলে তাওহীদ খানের নেতৃত্বে স্থানীয় এনামুলসহ ৪/৫জন মিলে শনিবার বিকেলে গৈলা বাজারে প্রকাশ্যে মারধর করে হাফিজুল দাড়িয়ার দোকান থেকে কাঁচি এনে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। শিশুর মা সানু বেগম অভিযোগে বলেন, দুপুরে তার ছেলে বাড়ি আসে। একটু পরে গৈলা অলি টেলিকমের মালিক অলি বেপারী তাদের বাড়ি এসে সজীবকে বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। তার পরে বিকেলে তার ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসে জানায় যে একটি মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। তিনি ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, আমার ছেলে যদি চুরি করে থাকে তাহলে তারা আমার কাছে বিচার দিলে আমি আমার ছেলের বিচার করতাম। আমার শিশু পুত্রকে মারধর করে বাজারের লোকজন অমানবিকভাবে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। শিশুর বাবা ভ্যান চালক লাল মিয়া সরদার বলেন, আমরা গরীব মানুষ আমাদের এই ঘটনার মধ্যে টানবেন না। ঘটনাটি অমানবিক বলে তিনি বিষয়টি নিয়ে তার যেন কোন সমস্য না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার অনুরোধ করেছেন। অলি টেলিকমের মালিক অলি বেপারী বলেন, আমি দোকানে না থাকার অবস্থায় অন্য একজনের উপস্থিতিতে সজীব আমার দোকান থেকে বিকাশ ও নগদ এজেন্টের দুটি সীম ভরা একটি মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়। দোকানের সিসি টিভি দেখে সজীবকে ফোন নেয়ার ঘটনায় তার বাড়িতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে ফোন চুরির কথা স্বীকার করে। এক পর্যায়ে চুরি যাওয়া ফোনটি সজীব ফেরত দেয়। তার মধ্যে সীম না থাকায় তাকে সীম দুটি ফেরত দিতে বললে সে জানায় সীম ফেলে দিয়েছে। কোথায় ফেলেছে তা দেখানোর জন্য তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনলে সজীব কাঁচা বাজারের ময়লা ফেলার স্থান দেখিয়ে দিলে সেখানে খুঁজে সীম দুটি উদ্ধার করি। পরে তাকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পরে মিলাদের তোবারক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই। এর পরে শুনেছি যে বাজারে বসে তার চুল কেটে দিয়েছে উৎসুক লোকজন। বাজার ব্যবসায়ি কমিটির সভাপতি সুশান্ত কর্মকার বলেন, তিনি গৈলা মনসা পূঁজার আয়োজনের জন্য মনসা বাড়িতে ছিলেন। বাজারে এসে একটি শিশুর চুল কাটার কথা শুনেছেন। তবে কে বা কারা ওই শিশুটির চুল কেটেছে তা তিনি জানেন না। গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু বলেন, তিনি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ঘটনা জানতেন না। লোক মুখে ঘটনা শুনে তিনি গৈলা বাজারে উপস্থিত হয়ে শিশুকে মারধর ও চুল কাটার কথা জানতে পারেন। অমানবিক এই এই ঘটনায় তিনি আইনগত বিচার দাবি করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এব্যাপারে থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম নির্যাতিত ওই শিশুর বাড়ি অবস্থান করে তাওহিদ নামের একটি ছেলে শিশুটির চুল কটেছে জানিয়ে বলেন, শিশুটির মা ও বাবাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। থানায় বসে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।