মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

গাড়ির ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিশ্বের তৃতীয় শহর ঢাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ঢাকা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের অন্যতম নির্মল বায়ুর শহর। বিধিনিষেধ ওঠার কয়েক দিনের মধ্যেই আবার এই শহর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এসেছে। গত শনিবার কানাডার ভ্যানকুভারের পরই ঢাকার বাতাস ছিল সবচেয়ে খারাপ। এই দূষণের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে যানবাহনের ধোঁয়া। এ কথা কয়েক বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন। সা¤প্রতিক এক গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শহরগুলোতে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ির ধোঁয়া থেকে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা তৃতীয়। এ থেকে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে এখানে, বিশ্বের গড় মৃত্যুহারের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ। যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতেই বেশি দূষণ হচ্ছে। তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার তুলনায় প্রায় চার গুণ।
‘বিশ্বের ১০ দেশের শহরে গাড়ির ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন স¤প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইথিওপিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, চীন, ইরাক, মিসর, তানজানিয়া, কলম্বিয়া ও মালাবির ১৫ জন গবেষক এই গবেষণা করেন। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, সামগ্রিকভাবে ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছে। কিন্তু কোন উৎস থেকে কী ধরনের দূষণ হচ্ছে, তা বুঝতে বিশ্বের জনবহুল ও মধ্যম আয়ের দেশের বড় শহরগুলোর ওপর গবেষণাটি করা হয়। রাজধানীতে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে যানবাহনের ভূমিকা দ্রুত বাড়ছে, তাই এখন থেকে এসব উৎস বন্ধ না করলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
গবেষণায় গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ বিবেচনায় নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে বছরে গড়ে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা থাকে ৯২ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে এটা থাকার কথা ২৫ মাইক্রোগ্রাম। মূলত পুরাতন গাড়ি, নিম্নমানের জ্বালানি, যানজট, গাড়ির গতি ও সংখ্যার ভিত্তিতে এই দূষণ বাড়ে। যাত্রী, পথচারী থেকে শুরু করে সড়কের পাশের বাসিন্দারা এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। ঢাকার বাতাস সকালে সবচেয়ে কম ও সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি দূষিত থাকে। এখানে ১ হাজার ৬৪০ বর্গকিলোমিটারে ৩ লাখ ৩৫ হাজার গাড়ি চলে। বাসিন্দাদের প্রায় আড়াই শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে। তারা শুধু গাড়ির গ্লাস নামালে দূষণের শিকার হয়। আর বাকিরা বাস, হেঁটে ও রিকশায় চলাচল করে। তাদের প্রায় সবাই দূষণের কবলে পড়ে।
ঢাকার পাশাপাশি ভারতের চেন্নাই, ভেলোর, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, চীনের গুয়ানজু, জেংঝোউ ও নানজিং, কলম্বিয়ার বোগোটা ও মেডেলিন, ব্রাজিলের সাও পাওলো, কুরিটিবা ও লনড্রিন, মিসরের কায়রো, ইরাকের সুলায়মানিয়া, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা, মালাবির ব্লানতাওরি ও তানজানিয়ার দারুস সালাম শহরে গবেষণাটি করা হয়। দেখা গেছে, এসব শহরের মধ্যে গাড়ির গতি সবচেয়ে কম দারুস সালামে। সেখানে ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলে। এরপরেই রয়েছে ঢাকা, গতি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার। এই দুই শহরেই সবচেয়ে বেশি সময় মানুষ দূষিত বাতাসের মধ্যে থাকে। গাড়ি থেকে নির্গত দূষিত বাতাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক থেকে ঢাকা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দারুস সালাম ও ব্লানতাওরি। দারুস সালামে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় আড়াইজনের মৃত্যু হয় এই দূষণে। ঢাকা ও ব্লানতাওরি শহরে মারা যায় একজন করে। যেখানে এই দূষণে বিশ্বে গড়ে ১০ লাখ মানুষে সর্বোচ্চ একজনের মৃত্যু হয়।
যন্ত্র নেই বিআরটিএর ঢাকায় কোন গাড়ি চলতে পারবে, আর কোনটা পারবে না, সেই সনদ দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়ির ধোঁয়া মাপার যন্ত্র তাদের নেই। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে চোখে দেখে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই যন্ত্র কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরই ধোয়া দূষণ রোধে কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সরওয়ার আলম বলেন, তাঁরা বৃহস্পতিবারও ঢাকায় গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণে সভা করেছেন। গতকালও ঢাকায় যানবাহনের বায়ুদূষণসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই অভিযান আরও বাড়বে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ নজমূল আহসান বলেন, তাঁরাও ঢাকার বায়ুমান উন্নতির জন্য অভিযান বাড়াচ্ছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com