জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেনের কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই ডিভাইডারে লাগানো হয়েছে ডব্লিউ বিম (গার্ড রেল)। তবে এই ডব্লিউ বিম লাগানোর দুই বছরেই বিভিন্ন জায়গায় মরিচা ধরেছে। মহাসড়কে নিম্নমানের ডব্লিউ বিম লাগানোর অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে মহাসড়কে বিভিন্ন জায়গায় ডিভাইডারে লাগানো ডব্লিউ বিমে মরিচা (জং) ধরতে দেখা গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ফলে কোথাও কোথাও বিমগুলো বেকে ও ভেঙে গেছে। এছাড়াও অল্প দিনেই ডব্লিউ বিমে মরিচা ধরার ফলে হালকা দুর্ঘটনায় তা ভেঙে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। কয়েক দফা ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজটি করা হচ্ছে। ৭০ কিলোমিটার মিটারের এই মহাসড়কের চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাজটি চলমান রয়েছে। আর এই মহাসড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ সালের জুন মাসে। মহাসড়কে লেন থেকে দুর্ঘটনায় কবলিত পরিবহন যাতে অন্য লেনে যেতে না পারে এজন্য মহাসড়কে প্রায় দুই বছর আগে ডিভাইডারে লাগানো হয় ডব্লিউ বিম। আর ডব্লিউ বিমের স্থায়ীত্বকাল ধরা হয় প্রায় ২০ বছর। এই সময়ে ডব্লিউ বিমে প্রখর রোদ ও বৃষ্টিতে কোন মরিচা বা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নিম্নমানের ডব্লিউ বিম লাগানোর প্রায় দুই বছরের মধ্যেই দেখা দিয়েছে মরিচা। এতে কোথাও কোথাও অল্প আঘাতেই ভেঙে ও বেকে যাচ্ছে। এদিকে এসব মরিচা ধরা ডব্লিউ বিমগুলো খুলে সেগুলো নির্দিষ্টস্থানে নিয়ে রংয়ের প্রলেপ দিয়ে আবার মহাসড়কে লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে কয়েকমাস পরেই বিমগুলো রোদ বা বৃষ্টিতে পুনরায় মরিচা ধরছে। মহাসড়কের করটিয়া এলাকার বাসিন্দা ওয়ালিব বলেন, ‘মহাসড়কে ডব্লিউ বিম লাগিয়েছে বেশি দিন হয়নি। এই অল্প দিনেই ডব্লিউ বিমের বিভিন্ন জায়গায় মরিচা ধরেছে। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে হালকা দুর্ঘটনায়ও ডব্লিউ বিম বেকে যাচ্ছে। নি¤œমানের ডব্লিউ বিমের লাগানোর কারনে এমনটা হতে পারে।’ মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ডব্লিউ বিমের বিভিন্ন জায়গায় জং ধরেছে। এত অল্প দিনে জং ধরার কারণ কী? নিম্নমানের ডব্লিউ বিম লাগানোর কারণে এমনটা হতে পারে।’ জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মহাসড়কের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। ডব্লিউ বিম চায়না থেকে এনে যেখানে স্টোর করা ছিল সেখানে কিছু কিছু পোটিংয়ে সমস্যা হয়েছে। ডব্লিউ বিমের স্থায়ীত্ব কাল সাধারণত ১০ থেকে ২০ বছর থাকে। এরমধ্যে কোন ধরণের জং বা মরিচা ধরবে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় প্রতিয়মান হয়েছে। যেসব জায়গায় হয়েছে সেগুলো জিংপোটিং করা হচ্ছে। যেগুলো দুর্ঘটনার কারণে ভেঙে যাচ্ছে সেগুলো সরিয়ে আবার নতুন করে লাগানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ ডব্লিউ বিমের রঙ করা হচ্ছে না। যেসব জায়গায় জিংপোটিং সরে গেছে সেগুলো আবার স্প্রে করা হচ্ছে। মি¤œমানের ডব্লিউ বিম লাগানো হয়নি। আমরা মরিচা ধরা ডব্লিউ বিম বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। টেস্টে ম্যাটারিয়ালগুলো ঠিক আছে। কিন্তু কোটিংগুলো যেখানে উঠে গেছে সেগুলো আবার জিংকের কোট করা হচ্ছে।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্স এন্ড ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘ডব্লিউ বিম সারা বিশে^ই ব্যবহার করা হয়। এটা এক দুই বছর কেন? এটা ১০ থেকে ২০ বছর মেয়াদী থাকে। এটা মরিচা ধরার কথা না। নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করার কারণে মরিচা ধরতে পারে।’ কোনও পরিবহন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে যাতে অন্য লেনে না যেতে পারে এজন্য মূলত ডব্লিউ বিম লাগানো হয় বলেও তিনি জানান।