বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবি ও দৈনিক নয়া দিগন্তের নিয়মিত কলাম লেখক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ আর নেই। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাজশাহীতে ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক। উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও বিভিন্ন বিষয়ে বহুমাত্রিক লেখার জন্য তিনি পরিচিত। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায়ও তিনি নিয়মিত কলাম লিখে আসছিলেন। পরিবারের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই তিনি বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এক মাস আগে শারীরিক অসুস্থতায় তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সুস্থ হলে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মাঝখানে তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হলেও পরে করোনামুক্ত হন।
পরিবারের সূত্রে জানানো হয়, রোববার সকালে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েক দিন থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের কাছে দাবি করা হলেও তার কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এবনে গোলাম সামাদ বিরল প্রতিভার একজন অনন্য লেখক ও কলামিস্ট ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। বিজ্ঞান তিনি শিখেছেন ও শিখিয়েছেন পদ্ধতিগতভাবে। তার একটি বৈজ্ঞানিক মানস ও স্বকীয় চিন্তারীতি গড়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার সমৃদ্ধ ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তিনি লিখেছেন, আমি ছিলাম, ঐ যাকে সাধারণভাবে বলে অভিজ্ঞতাবাদী (Empiricist)। সবকিছু যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত হয় না। কেউ যদি বলে, রাজশাহীর বাজারে ১৪০ রকম আম বিক্রি হয়, তবে তার কথাটা সত্য কি না, সেটা জানবার জন্য যেতে হবে রাজশাহীর বাজারে। বিশুদ্ধ যুক্তি দিয়ে এটার সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না। এখান থেকে স্পষ্ট যে তিনি পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণমূলক অভিজ্ঞতাকে সবচাইতে গুরুত্ব দিতেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে তার নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ, বস্তনিষ্ঠ এবং ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক মানসের উৎস।
তার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যা তার লেখার পরতে পরতে দৃশ্যমান ছিল। সেটি হলো এদেশের গণমাধ্যমে ও বুদ্ধিবৃত্তির বলয়ে বহুল প্রচলিত যেসব ভাষ্য ও বয়ান পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ব করছে তিনি সেগুলোকে তার নিজস্ব পড়াশুনা, জ্ঞান ও বিচার-বিশ্লেষণ দিয়ে যাচাই বাছাই করে নেন। তিনি এমন কোন দল বা পক্ষ অবলম্বন করেননি, যেখানে তথ্য ও সত্যের চাইতে রঙ মাখানো প্রচার-প্রপাগাণ্ডাই মুখ্য। এ কারণে তাকে এদেশে বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত মোটা দাগের বোকা বোকা বয়ানগুলো পুনরুৎপাদন করতে দেখা যায়নি। বরঞ্চ তিনি নিঃস্বার্থভাবে ও নির্মোহভাবে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রতিটি বিষয়কে দেখতে, বুঝতে ও বোঝাতে চেয়েছেন।
জামায়াত আমিরের শোক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কলাম লেখক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবাণীতে তিনি বলেন, বিশিষ্ট কলামিস্ট, দার্শনিক, গবেষক, সমাজ চিন্তক, ইসলামিক ও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী, বর্ষিয়ান শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ ছিলেন একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। তিনি তার লেখনির মাধ্যমে জাতির জন্য অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হয়েও তিনি সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তার লেখনির মাধ্যমে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়ে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন এবং জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। তার লেখনি দেশপ্রেমিক তরুণ ও যুব সমাজকে আলোড়িত ও দেশ গড়ার কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আজীবন সত্য প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন। মহান রব তার শূন্যতা পূরণ করে দিন। শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তার এ গোলামের সকল নেক খেদমত কবুল করুন। তার গুনাহখাতাগুলো মেহেরবানি করে মিটিয়ে দিন। পরের মঞ্জিলগুলো তার জন্য শান্তি, রহমত, মাগফিরাত ও বারাকার চাদরে ঢেকে দিন। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস ও দারাজাহ দান করুন। তার শোকাহত স্বজনদের এবং সহকর্মীদেরকে আল্লাহ সবর দান করুন। আমিন।
বিএফইউজে-ডিইউজের শোক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, কলামিস্ট, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি প্রফেসর ড. এবনে গোলাম সামাদের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন এবং ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম এক যুক্ত শোক বার্তায় বলেন, এবনে গোলাম সামাদ বিরল প্রতিভাবান লেখক ও কলামিস্ট ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য শিক্ষক ও অভিভাবককে হারাল। শোক বার্তায় নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এবনে গোলাম সামাদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম। গতকাল রোববার দুপুরে জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক ড. মো: আজিজুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এছাড়া অধ্যাপক সামাদের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো: জাকারিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, কলামিস্ট, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি প্রফেসর ড. এবনে গোলাম সামাদের ইন্তিকালে পৃথক পৃথক বিবৃতিতে আরো শোক প্রকাশ করেছেন,দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের আহবায়ক আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও সমন্বয়ক মোস্তফা মনোয়ার, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির চেয়ারম্যান শরীফ বায়জীদ মাহমুদ,সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী, কবিতা বাংলাদেশের সভাপতি কবি আল মুজাহিদী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আখন্দ,।