রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ন

আজ পবিত্র আশুরা

ইসলাম ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ এক দিন আজ। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ আজ শুক্রবার। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায়, মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলে। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শহীদ হয়েছিলেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল। তবে কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে এই দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে এই দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাঁদের পেছনে থাকা ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়। এমন অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছিল এই দিনে।
আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
হিজরি ৬১ সালে ইমাম হোসাইন (রা.) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর সঙ্গে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে সপরিবার শহীদ হন। শান্তি ও স¤প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। এই অনন্য দৃষ্টান্ত শত শত বছর ধরে ন্যায় ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে।
করোনার বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষাপটে এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর কাছে এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। সাধারণত ৯ মহররম রাত থেকেই আশুরার বিশেষ ইবাদত–বন্দেগি শুরু হয়। অনেকেই আজ নফল রোজা রাখবেন। দান-খয়রাত করবেন। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করবেন, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করবেন ও জিকিরে নিবেদিত থাকবেন। করোনার সংক্রমণের কারণে এবার রাজপথে তাজিয়া মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি থাকবে।
পবিত্র আশুরা : করণীয় ও বর্জনীয়: (পবিত্র আশুরা : করণীয় ও বর্জনীয় এই অংশটুকু লিখেছেন জামেয়া শরাফতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা, মুছাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালীর অধ্যক্ষ, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ইমতিয়াজ।-বার্তা সম্পাদক) হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসটি একটি বরকতময় ও হারাম মাসগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এ মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা বিশেষত সাইয়্যিদুল আম্বিয়া হজরত রাসূলে আকরাম সা:-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন রা:-এর শাহাদতের কারণে আশুরার দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময় দিন। এ দিন ঐতিহাসিকভাবে যেসব ঘটনার কথা জানা যায়Ñ১. মহান আল্লাহ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। ২. আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেন। ৩. আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে প্রথম বৃষ্টি ও রহমত বর্ষণ করেন। ৪. মহান আল্লাহ তায়ালা আদম আ:কে সৃষ্টি করেন। ৫. হজরত আদম আ:কে দীর্ঘ কান্নাকাটির পর ক্ষমা করে দেন। ৬. হজরত নূহ আ: তার সঙ্গী-সাথীসহ বন্যা থেকে মুক্তি পান এবং তার নৌকা জুদি পাহাড়ে অবস্থান নেয়। ৭. হজরত ইদ্রিস আ: জীবিত বেহেশতে উপনীত হন। ৮. মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর জন্ম হয়। ৯. হজরত ইবরাহিম আ: ফিরাউনের অগ্নিকু- থেকে মুক্তি পান। ১০. হজরত মূসা আ: আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলেন ও তাওরাতপ্রাপ্ত হন। ১১. হজরত ইউনূস আ: ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে মুক্ত হন। ১২. হজরত আইয়ুব আ: দীর্ঘ ১৮ বছর রোগে ভোগার পর সুস্থ হন। ১৩. হজরত দাউদ আ: ক্ষমাপ্রাপ্ত হন এবং হজরত সোলাইমান আ: আল্লাহর অনুগ্রহে রাজত্ব ফিরে পান। ১৪. হজরত ইউসুফ আ: গভীর কূপ থেকে উদ্ধার পান। ১৫. তিনি ৪০ বছর পর তাঁর পিতার সাথে মিলিত হন। ১৬. হজরত মূসা আ: ও তাঁর অনুসারীরা নীল নদ অতিক্রম করেন এবং ফিরাউন তার দলবলসহ নীল নদে নিমজ্জিত হয়। ১৭. হজরত ঈসা আ:কে জীবিত আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। ১৮. রাসূলে আকরাম সা:-এর প্রিয় দৌহিত্র হুসাইন রা: তার পরিবার পরিজনসহ কারবালার প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। ১৯. এ দিন জুমাবার কিয়ামত সংঘটিত হবে। আশুরার আমল বা করণীয় : আশুরায় রোজা রাখা।
১. হজরত আবু মূসা রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনকে ঈদ হিসেবে গণ্য করত। হুজুর সা: সাহাবিদেরকে বললেন, ‘তোমরা ওই দিন রোজা রাখো’ (বুখারি-১৮৬৮)।
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ‘আমি হুজুর সা:কে এ দিন অর্থাৎ আশুরার দিন এবং এ মাস তথা রমজান মাস ভিন্ন আর কোনো দিনকে অধিক মাহাত্ম্যপূর্ণ করতঃ রোজা রাখতে দেখিনি’ (বুখারি- ১৮৭৯, মিশকাত-১৯৪২)।
৩. হজরত সালমা ইবনে আকওয়া রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সা: আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন সে যেন লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দেয় যে, যে ব্যক্তি কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন দিনের বাকি সময়টুকু রোজা রাখে। আর যে কিছু খায়নি সে যেন পূর্ণ দিন রোজা রেখে দেয়। কেননা, আজ আশুরার দিন’ (বুখারি-১৮৭০)।
৪. হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের রোজার পর সবচেয়ে ফজিলতের রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা’ (তিরমিজি-৭৩৮)।
৫. হজরত আবু কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিতÑ নবী করিম সা: ইরশাদ ফরমাইয়াছেন, ‘আশুরার দিবসের রোজা পালন সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, এর মাধ্যমে তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা করে দেবেন। এ বিষয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়ের রা: প্রমুখ নবী করিম সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আশুরার দিবসের রোজা পালন করতে উৎসাহিত করেছেন’ (তিরমিজি-৭৫০)।
৬. হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজার পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজাই হলো শ্রেষ্ঠ রোজা এবং ফরজ নামাজের পর রাতের নামাজই শ্রেষ্ঠ নামাজ’ (মুসলিম, মেশকাত-১৯৪১)।
৭. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লøাহ সা: আশুরার দিনে রোজা রাখলেন এবং তাতে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: এই দিনকে তো ইহুদি এবং নাসারারা সম্মান করে। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি নিশ্চয়ই আমি নবম তারিখেও রোজা রাখব।’
বর্জনীয় কাজ : ১. আশুরার দিনকে উৎসব বা মেলার দিন হিসেবে পালন না করা। ২. আবার শোক দিবস হিসেবে শোকগাথাও পাঠ না করা। ৩. আহলে বাইতের কথা স্মরণ করে দুঃখ প্রকাশ করা ও কান্নাকাটি করা যাবে না। ৪. তাজিয়া ও নিশান বের করা যাবে না।
৫. এ দিনকে উপলক্ষ করে ক্রীড়া কৌতুক ইত্যাদি না করা। অতএব, আসুন আমরা পবিত্র আশুরায় রোজা পালনসহ যাবতীয় ভালো কাজগুলো করি ও নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিহার করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন, আমীন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com