সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন

এই অবস্থায় কে আমাকে দিয়ে অভিনয় করাবে?

বিনোদন ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ২০০০ সালে হারিয়েছেন সহধর্মিনী অজন্তা মিত্রকে, ২০১২ সালে মারা যায় ছোট ছেলে আকাশ। ২০২১’র শুরুতে মারা যায় তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। খুব শখ ছিলো এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আড্ডা দেবার। সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীনের সঙ্গে কথা বলে তারিখও নির্ধারণ করেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের আগের দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবীর মিত্র। আর শেষ দেখা হলো না প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে।
প্রবীর মিত্র বলেন,‘খুব ইচ্ছে ছিলো খোকনের (এটিএম শামসুজ্জামানের ডাক নাম) সঙ্গে আড্ডা দেবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলো না। আমার আগেই আমার বন্ধু চলে গেলো। খুব কষ্ট পেয়েছি। কতো যে স্মৃতি খোকনের সঙ্গে তার কোন হিসেবে নেই। পুরান ঢাকার মানুষ আমরা। সুখে দুঃখে একসঙ্গে আমাদের যে কতো সময় কেটেছে তার কোন হিসেবে নেই। আজ জীবনের এই সময়ে এসে কতো কিছু যে মনে পড়ে। কতো জন’কে যে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারি না। সত্যি বলতে কী কেউই এখন আর ফোন করে না, খোঁজও নেয় না। মানুষের জীবনের শেষ সময়টুকু বুঝি এমনই, চাইলেই কোথাও যাওয়া যাবে না, কারো সঙ্গে দেখাও করা যাবে না। খুব খারাপ লাগে, কষ্ট হয়।’ চলচ্চিত্রের এই জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা প্রায় ১৪ বছর ধরে দুই পায়ের হাটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচাতেই সময় কাটছে তার। কানেও এখন খুব কম শুনছেন। মেশিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছেনা। চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনেতা দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে আজ ৮০ বছরে পা রাখলেন।
তার ছেলে নিপুণ জানান ১৯৮২ সালে প্রবীর মিত্র মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরো বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। তবে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক পাননি নিবেদিত এই অভিনেতা। পেয়েছেন ‘প্রযোজক সমিতি অ্যাওয়ার্ড’, ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সম্মাননা’,‘মাদার তেরেসা স্মৃতি পদক-২০১৭’,‘ জাগো বাংলা সম্মাননা’, ‘আমরা কুড়ি সম্মাননা’,‘ মহানগরী অ্যাওয়ার্ড’, ‘দর্শক ফেরাম অ্যাওয়ার্ড’, ‘ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি অ্যাওয়ার্ড’সহ আরো বহু সম্মাননা।
তবে প্রবীরমিত্র বলেন,‘দর্শকের ভালোবাসাই আমার কাছে সবসময়ই অমূল্য অর্জন। দর্শকের ভালোবাসাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই আমি।’ প্রবীর মিত্রের দুই বোন, একজন স্বরস্বতী বসূ অন্যজন রমা সরকার। ছোট ভাই সুবীর কুমার মিত্র। রাজধানীর তাতীবাজারের হরিপ্রসণ মিত্র রোড প্রবীরমিত্ররই দাদার নামে। প্রবীর মিত্র’র বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র এবং মা অমিয় বালা মিত্র। নায়ক হিসেবে প্রবীরমিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো জহির রায়হানের শেষ সহকারী শেখ নজরুল ও ইলতুত মিস পরিচালিত ‘চাবুক’। এতে প্রবীর মিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী। অভিনয়ের পথচলায় বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেকে প্রযোজক পরিচালকের কাছে এখনো অনেক টাকা পাওনা তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রবীর মিত্র বলেন,‘ আমি মনে করি যে এই টাকাটা আমার ছিলো না। তাই আমি পাইনি।’
সর্বশেষ প্রবীর মিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর আর কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি। এখনো অভিনয়ে আগ্রহ আছে আপনার? প্রশ্ন শুনে একটু মন খারাপ হলো তার। একটু থেমে বললেন, ‘অভিনয়টাইতো পারি, আর তো কিছু পারি না। অভিনয় তো আজীবন করে যেতে চাই। কিন্তু আমার এই অবস্থায় কে আমাকে দিয়ে অভিনয় করাবে? তবে হ্যাঁ, যদি বসে বসে অভিনয় করানোর কোন ব্যবস্থা থাকে তবে আমি অভিনয় করতে পারবো।’-বাংলাদেশ জার্নাল




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com