বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান শ্রীমঙ্গলে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে লাখ টাকা জরিমানা শিক্ষকের দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক এমপি’র তারাকান্দায় তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা সলঙ্গা কুঠিপাড়া মাদ্রাসায় কোরআনের ছবক সেবা মান উন্নয়নে বিআরটিএ’র গণশুনানি দাগনভূঞা বিআরডিবি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নজির আহাম্মদ বিজয়ী তাঁর খালার আমলে মানুষ গুম করা হয়েছিল, এরপরও টিউলিপকে কেন মন্ত্রী করলেন স্টারমার এখনই নয়, ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল গাজা যুদ্ধ : সদ্যজাত ২১৪ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল সংস্কার প্রশ্নে ৩১ দফার দিকে তাকান, অন্তর্বর্তী সরকারকে দুদু

মানুষের ঢাকা ছাড়ার হিড়িকে করোনা সারা দেশে ছড়িয়েছে 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ন্যাচার’র গবেষণা প্রতিবেদন 

গত বছরের ২৩ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হতেই ঢাকা থেকে গ্রামমুখে মানুষের ঢল নামে। ঢাকা ছাড়ার এই ঢলই করোনার বিস্তার ঘটিয়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তাররোধে সরকার গত বছর প্রথম দফায় যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল, ওই সময় মানুষের ঢাকা ছাড়ার হিড়িকই দেশব্যাপী এ মহামারির বিস্তার ঘটায়। দেশি-বিদেশি সাতটি প্রতিষ্ঠানের এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সিনিয়র ম্যানেজার (কমিউনিকেশনস) এ কে এম তারিফুল ইসলাম খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে একটি জিনোমিক কনসোর্টিয়ামের আওতায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে এ গবেষণা শুরু হয়। গবেষণায় বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের উদ্ভব, দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারে লকডাউনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের চলাচলের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মার্চ-জুলাই অন্তর্র্বতীকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উদ্ভব ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় এবং পরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে আরও ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর বিস্তাররোধে ২৩ মার্চ বাংলাদেশ সরকার (প্রথম দফায়) ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম থেকে সংগৃহীত ফেসবুক এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী এ অন্তর্র্বতীকালীন ২৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে জনসাধারণের ঢাকা ত্যাগ করার প্রাপ্ত ডাটার সঙ্গে সার্স-কোভ-২ জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৩ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা বহির্মুখী যাতায়াতই মূলত দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক কারণ।
পরে কনসোর্টিয়াম নভেম্বর ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে সংগৃহীত আরও ৮৫টি সার্স-কোভ-২ নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩০টি ছিল লিনিয়েজ বি.১.১.২৫ (৩৫%), ১৩টি ছিল আলফা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.১.৭, ১৫ শতাংশ), ৪০টি ছিল বিটা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১,৪৭ শতাংশ), একটি ছিল লিনিয়েজ বি.১.১.৩১৫, এবং একটি ছিল লিনিয়েজ বি.১.৫২৫। প্রথম ঢেউয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভাইরাসের বিস্তাররোধে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমন- এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘আমাদের এই কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন সময় নীতিনির্ধারকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। এর মধ্যে রয়েছে- সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা, পরিবহন এবং যানবাহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন এবং যেসব দেশে উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ছিল সেখান থেকে আগত ভ্রমণকারীদের সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা রাখা, সময়মতো লকডাউনের সিদ্ধান্ত বা প্রয়োজনবোধে আন্তর্জাতিক চলাচল সীমাবদ্ধ করা। আমাদের এ কনসোর্টিয়াাম গত বছরের মার্চ মাস থেকে একত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এই কাজ চলমান এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্য কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রমাণভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবো।’ গবেষণাপত্রের মূল লেখকদের একজন ডক্টর লরেন কাউলি বলেন, ‘জেনোমিক এবং মবিলিটি ঢাকা থেকে বিভিন্ন ডাটা স্ট্রিম একত্রিত করে আমরা কীভাবে করোনাভাইরাস বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়েছিল তা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ গবেষণাটিতে মহামারি প্রতিরোধে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য মহামারির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিকোলাস থমসন বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ওপর একসঙ্গে কাজ করছি। বিজ্ঞানীরা যখন জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করেন তখন কতটা সাফল্য অর্জন করা যায় এ গবেষণাপত্রটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।’ হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ক্যারোলিন বাকি বলেন, ‘মবিলিটি ডাটা, প্রথাগত চলমান সার্ভেলেন্স সিস্টেমের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ ধরনের একটি মিলিত বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে, যা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করা কঠিন। এ ধরনের গবেষণা শুধু চলমান করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের যে কোনো মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং এ গবেষণার অন্যতম নেতা ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতা এবং লকডাউনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমার সহকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক কোলাবোরেটরদের সহযোগিতায় সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমাদের দায়িত্ব এ গবেষণায়ই সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীজুড়েই বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পর মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে এবং এর মধ্যে কিছু ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার। এই টিকার কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদের এ ধরনের কাজ অব্যাহত রেখে সরকারকে সময়মতো সঠিক তথ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।’ এ গবেষণায় ফেসবুক ডেটা ফর গুড, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড জনসংখ্যা মোবিলিটি তথ্য সরবরাহ করেছে। বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সার্স-কোভ-২ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে সহায়তা করেছে।
‘করোনা প্রত্যেকটা মানুষকে না-পুড়িয়ে থামবে না’: ভারত থেকে প্রকাশিত সূত্র : এই সময় পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফ আপাতত স্বস্তি দিলেও তাতে উল্লসিত হওয়া কিছু নেই। বরং আগামী ছয় মাসে মহামারী পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরামর্শদাতা তথা সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর মাইকেল অস্টারহোম।
তার কথায়, ‘এই কোভিড-১৯ আসলে দাবানলের মতো, প্রত্যেকটা মানুষকে না-পুড়িয়ে থামবে না।’ অর্থাৎ, এই ছয় মাসের মধ্যে হয় সবাই করোনায় আক্রান্ত হবেন, না হয় ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন- এমনটাই মনে করছেন এই সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। দুটিই হতে পারে। আবার কেউ কেউ একাধিকবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন অস্টারহোম। আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিও মোটামুটি খোলা। কিন্তু আগামী ছয় মাসে সংক্রমণের ঠেলায় ফের সব বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বাইডেনের পরামর্শদাতা। তার মানে কি ফের উপচে পড়বে হাসপাতাল? আপাতত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কয়েক মাসের মধ্যে আবার সেই দুর্দিন ফিরে আসতে পারে বলে কার্যত গোটা বিশ্বকেই সতর্ক করলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ। যথাযথ কোভিডবিধি মেনে চললেও নিস্তার নেই এই কোভিড-গ্রাস থেকে? অস্টারহোমের মতে, বিধিপালন এবং টিকাকরণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটা ঢেউ থেকে আর একটা ঢেউ আসার মাঝে সার্স কোভ-২ যেভাবে রূপ বদলাচ্ছে, সেটাই ভাবনার। করোনার যেসব ভ্যারিয়েন্ট টিকাকে রেয়াত করছে না, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া সেইসব প্রজাতি নিয়েই শঙ্কা দেখছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ। টিকাকরণে গতি এলেও সদ্যোজাত বা দুরারোগ্য কোনো রোগে আক্রান্তদের নিয়েই বেশি ভয় পাচ্ছেন তিনি।
অস্টারহোমের কথায়, ‘সংক্রমণের ঢেউ নামবে, আবার চড়বে। বিশ্বজুড়ে একটা বড় অংশের মানুষের যেহেতু টিকাকরণ হয়নি, তাই গণপরিবহণ, ক্লাসরুম কিংবা অফিস-কাছারিতে ফের গণসংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বলাই বাহুল্য, এর জেরে অর্থনীতিও আরো একবার জোর ধাক্কা খাবে।’
এই মহামারী তাহলে শেষ কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৩০ বছরের ইতিহাস ধরলে ৫ বছর পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছে গ্লোবাল ফ্লু। করোনাও কি সে দিকেই এগোচ্ছে? ডেনমার্কের এপিডেমিওলজিস্ট লোন সিমোনসেনের দাবি, ‘কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ, এই ভাইরাস একেবারেই নতুন, নিত্যনতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করছে।’
এরই মধ্যে তবু টিকাকরণে গতি বাড়িয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরাইলের মতো দেশ। অথচ এসব দেশ থেকেও ‘ব্রেক থ্রু’ সংক্রমণের খবর আসছে রোজ। যার অর্থ- শিশুরা বা যারা টিকা পাননি, তাদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। করোনার ঝড় যে সহজে থামার নয়, মানছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তাদের একটাই পরামর্শ- মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলতেই হবে। শিখে নিতে হবে করোনার সাথে লড়াই করেই কিভাবে বাঁচতে হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com