মৌলভীবাজারে ৫৯তম মহান শিক্ষা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা সংসদ। দিনটি উপলক্ষ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে এক ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সভাপতি পিনাক দেবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুমন কান্তি দাশের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল খালিক, সাবেক ছাত্র নেতা ও সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আহমদ আফরোজ, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ফয়জুর মেহেদি, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সরোজ কান্তি দাশ,খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন সিলেট বিভাগের সভাপতি এলিজ্যাক, ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সহসভাপতি তপন দেবনাথ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংসদের সভাপতি প্রসান্ত কৈরী, কুলাউড়া উপজেলা সংসদের সভাপতি সামিন চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলা সংসদের সভাপতি সামায়েল রহমান, শহর শাখার সভাপতি তোফায়েল আহমদ ফাহিম। বক্তারা শিক্ষা দিবসের মর্ম কথা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন এবং আগামী দিনে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে দূর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এর আগে একটি র?্যালী এবং আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সঙ্কোচনমূলক শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন ১৭ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানি শাসকদের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ অনেকেই। নাম না জানা সেই আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতেই এই দিনটিকে পালন করা হয় শিক্ষা দিবস হিসেবে। তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতা দখলের দুই মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এস এম শরীফের নেতৃত্বে গঠন করেন শরীফ কমিশন খ্যাত শিক্ষা কমিশন। পরের বছরে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনের প্রস্তাবনাগুলো ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবনাই শুধু ছিল না, ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনে উচ্চশিক্ষা ধনিশ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া ‘শরীফ কমিশন’-এর শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‘অল পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’ দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী। তারই একপর্যায়ে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতি বছর এ দিনটিকে ‘মহান শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।