দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে নেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। দিবসকেন্দ্রিক ভার্চুয়াল সভা ছাড়া মাঠের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এ জোটকে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকালে তাদের কোনো মানবিক কার্যক্রমও চোখে পড়েনি। জোটের প্রধান শরিক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি দলগুলোর একক উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিও চোখে পড়েনি দীর্ঘদিন। গত দুই বছর যাবত করোনার প্রকোপ চলছে দেশে। এরমধ্যে নানা সময়ে স্থবির হয়েছে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। চরম সংকটে পড়ে মানুষ। বিশেষ করে যেমন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, তেমনি খাদ্য সংকট, অসুস্থতায় কেউ পাশে না আসা, মারা গেলে মরদেহ ধরতে অনীহাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বিশেষ করে এ কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধন্যবাদ পায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রভৃতি। ১৪ দলে এখন কোনো রাজনীতি নেই। এখন কোনো কার্যক্রমও নেই। যখন প্রয়োজন ছিল, সে প্রয়োজন অনুযায়ী সবাই সংঘবদ্ধ ছিল। এখনকার পরিস্থিতিতে সেটার কোনো কার্যকারিতা নাই রাজনীতিবিদরা বলেছেন, করোনা রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে মানুষের প্রকৃত সেবার দ্বার খুলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোসহ কয়েকটি দল এটি লুফে নিলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি অনেক দলকে। বিশেষ করে ১৪ দলকে দেখা যায়নি গত প্রায় দুই বছর। এমনকি সামনেও তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। মানুষের পাশে দাঁড়ানো বা রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনোটাই নেই তাদের।১৪ দল মাঠে নেই কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘১৪ দলে এখন কোনো রাজনীতি নেই। এখন কোনো কার্যক্রমও নেই। যখন প্রয়োজন ছিল, সে প্রয়োজন অনুযায়ী সবাই সংঘবদ্ধ ছিল। এখনকার পরিস্থিতিতে সেটার কোনো কার্যকারিতা নেই।’ জোটের শরিক বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, ‘১৪ দলের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে ১৫ আগস্ট শোক দিবসের ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। এরপর আর কোনো সভা হয়নি।’ ১৪ দল করোনায় অনেক ভার্চুয়াল মিটিং করেছে। প্রত্যেকটা ইস্যুতে আমরা মিটিং করেছি। করোনায় অন্য দল ঘরের ভেতরে ছিল, ১৪ দলও ঘরের ভেতরে ছিল। এখন করোনা কমছে, অন্য দল কাজ শুরু করেছে, আমরাও কাজ শুরু করবো
মাঠে ১৪ দলের নামও নেই, কোনো কর্মসূচিও নেই, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাঠে ব্যানারে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোটামুটি সিদ্ধান্তও হয়েছে। হয়তো খুব শিগগির প্রোগ্রাম চলে আসবে। কোভিড-১৯ এর চাপ কমলে ১৪ দল সারাদেশব্যাপী কর্মসূচি করবে।’
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৪ দল করোনায় অনেক ভার্চুয়াল মিটিং করেছে। প্রত্যেকটা ইস্যুতে আমরা মিটিং করেছি। করোনায় অন্য দল ঘরের ভেতরে ছিল, ১৪ দলও ঘরের ভেতরে ছিল। এখন করোনা কমছে, অন্য দল কাজ শুরু করেছে, আমরাও কাজ শুরু করবো।’
জানতে চাইলে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন বলেন, ‘১৪ দলের কার্যক্রম নিয়ে কোনো কমেন্ট নেই।’ সা¤প্রতিককালে কোনো কর্মসূচি আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইশের (করোনা) পরে।’ ২৩ দফার ভিত্তিতে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। যার মধ্য দিয়েই মূলত ক্ষমতায় আসে এই সরকার। অনেকে মনে করেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় জোটের কার্যক্রমে নেই গতি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুটে উঠছে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ। তবে এটিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না জোটের কেউই। জোট নেতারা মনে করেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামের এই জোট প্রয়োজনে ঠিকই আগের মতো সক্রিয় হবে।’- জাগো নিউজ