রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ অপরাহ্ন

ই-কমার্সে প্রতারণা: আগেই সতর্ক করেছিল প্রতিযোগিতা কমিশন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সম্প্রতি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণাকাণ্ডে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায় দেখছেন গ্রাহক, মার্চেন্ট ও খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যবসায় প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রুখতে গঠিত প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, এক বছর আগে স্বপ্রণোদিত হয়ে ইভ্যালির একটি অফারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তারা। সে মামলার রায় হয়েছিল, শাস্তি পেয়েছিল ইভ্যালি। তাদের দাবি, প্রচারের অভাবে সে তথ্য পৌঁছায়নি জনগণের দোরগোড়ায়। সংস্থাটি বলছে, প্রতারণা ঠেকাতে সরকারের অন্য সংস্থাও কাজ করছে। আর প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকা- থামাতে তারা তৎপর রয়েছে। যদিও প্রতিযোগিতা কমিশনের সঙ্গে একমত নন গ্রাহক, মার্চেন্ট ও খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) আইনজীবী ও করপোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের মতে, প্রতিযোগিতা কমিশন সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, কোন কোন অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন পদক্ষেপ নেবে, সেগুলো প্রতিযোগিতা আইনে বলা আছে। কিন্তু আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, প্রতিযোগিতা কমিশনের যখন যেখানে তৎপর হওয়ার দরকার ছিল, তখন ওনারা বসেছিলেন, পদক্ষেপ নেননি। এ কারণে গ্রাহকেরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড তাদের ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার ছাড়ে। যেখানে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে ৮০ শতাংশ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেওয়ার ঘোষণা ছিল।
আরও জানা যায়, সেই অফারের শর্তাবলি অংশের চার নম্বর শর্তে বলা হয়েছিল- ‘ঈদ ধামাকা’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাকে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকা পরিশোধের তিনদিন পর গ্রাহকের ক্যাশব্যাক আসবে। সেই ক্যাশব্যাক নগদে পাবেন না গ্রাহকেরা। সেটা যোগ হবে গ্রাহকের ইভ্যালি অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা দিয়ে আবার ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ৬০ শতাংশ ব্যালান্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে। ওই শর্তের কারণে ৮০-১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফারে যে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে ইভ্যালি থেকে পণ্য ক্রয় করবেন, তাকে ক্যাশব্যাক সুবিধা নিতে হলে আরেকটি পণ্য সেই পণ্যের মূল্যের ৪০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে কিনতে হবে
কমিশন সূত্র জানায়, ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাকা’ একবারই অনলাইনে দিয়েছিল ও এর স্থায়িত্বও ছিল স্বল্প সময়। ইভ্যালির প্রতারণার ফাঁদ থেকে গ্রাহকদের রক্ষার্থে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে কমিশন। সে মামলার রায়ের প্রেক্ষিতেই ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাকা’ অফার বন্ধ করে। জানা যায়, ইভ্যালির অস্বাভাবিক অফারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের উপ-পরিচালক (ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও গবেষণা) আনোয়ার-উল-হালিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে হয়েছে। তদন্তকাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই ইভ্যালির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। তাদের হস্তক্ষেপেই সেই অফার বন্ধ করা হয় এবং পরে আর তেমন অফার দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি ইভ্যালি বিরুদ্ধে। আমরা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ২০২০ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের একটা অফারের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। সেটার শুনানি হয়েছে। সেখানে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আট মাস আগে একটা রায়ও দেওয়া হয়েছে। ওই অফারটা তারা বন্ধ করেছে। তিনি বলেন, তাদের আরও অফার আমাদের কাছে আইনবিরোধী মনে হয়ছে। সেগুলোর তদন্তকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আমরা হয়তো শিগগিরই আদেশ দেবো। ইভ্যালি ছাড়া অন্যদের তথ্য-উপাত্তও আমরা সংগ্রহ করছি। সেখানেও যদি প্রতিযোগিতাবিরোধী কিছু হয় আমরা ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন, আমরা ইভ্যালির বিরুদ্ধে রায় দিলাম। তারা অফারটা বন্ধ করলো। তারপরেও কেউ সতর্ক হলোনা কেনো, আমার জানা নেই। ক্রেতাদের সতর্ক করতে বিষয়টি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কমিশনের সেই উদ্যোগ ও অন্তর্র্বতীকালীন ওই রায়ের সেভাবে প্রচারণা হয়নি জানিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন বলেন, আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলাম, রায় দিলাম। কিন্তু সেগুলো ঠিকমত প্রচার হয়নি। কমিশনের উদ্যোগের প্রচারণা হলে এত ক্রেতা প্রতারিত হতেন না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com