করোনা মহামারিতে ধস নেমেছে অধিকাংশ ব্যবসায়। কেউ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, আবার কেউ চেষ্টা করছে এখনো। তবে ব্যতিক্রম ছিল ফ্রোজেন ফুডের ব্যবসা। এক্ষেত্রে যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে করোনা। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় ঘরবন্দি মানুষের কাছে বেড়েছে ফ্রোজেন ফুডের চাহিদা। যার ধারাবাহিকতা রয়ে গেছে এখনো। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালে তাদের ব্যবসার পরিধি দ্বিগুণ হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বাজার খুব একটা কমেনি। তবে মহামারির আগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে বেচাকেনা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন, বিধিনিষেধ, সীমিত চলাফেরাসহ নানা কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। তারা ঘরে থেকে খেয়েছে ফ্রোজেন ফুড (হিমায়িত খাবার)। ফলে এ খাতে তৈরি হয়েছে বড় বাজার। এখন ঘরবন্দি পরিস্থিতি কেটে গেলেও পণ্যের চাহিদা রয়ে গেছে। অনেকেই অভ্যস্ত হয়েছেন এ ধরনের খাবারে। ফ্রোজেন ফুডের বাজারে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রান্ড প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ‘ঝটপট’। করোনাকালে এ ব্রান্ডের খাবার বিক্রি দ্বিগুণের বেশি। পাশাপাশি গত বছর রপ্তানিতেও আসে বাড়তি গতি। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জাগো নিউজকে বলেন, করোনায় মানুষের ফ্রোজেন ফুড খাওয়ার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছে, সে ধারাটা এখনো রয়ে গেছে। সেজন্য অব্যাহত রয়েছে চাহিদা। ফ্রোজেন খাবার এখন কেমন বিক্রি হচ্ছে তার একটা ধারণা মিলেছে ই-কমার্স সাইট প্রিয়শপ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খানের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, পুরোপুরি লকডাউনের সময় ফ্রোজেন ফুডের অর্ডারের অগ্রগতি ছিল ২০০ শতাংশ পর্যন্ত। সেটা একটা অবিশ্বাস্য সময়। এখন অর্ডার কমলেও করোনার আগের সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০-৫০ শতাংশ বেশি রয়েছে। জানা যায়, দেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পাশাপাশি কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হারভেস্ট, সিপি, ব্র্যাক চিকেন, বসুন্ধরা গ্রুপ, আফতাব ফুডস, আইজি ফুডস, রিচ ফুড, এজি গ্রুপ, ইউরো ফুড, লামিসা, ইগলু ও প্যারাগনসহ প্রায় দুই ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফ্রোজেন ফুড বিক্রি করে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। নতুন নতুন খাবার তৈরি ও বৈচিত্র্য এসেছে। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন এ বাজার প্রায় ৫০০-৬০০ কোটি টাকার। এরমধ্যে শেষ গত দুই বছরেই ফ্রোজেন ফুডের বাজার দ্বিগুণেরও বেশি বড় হয়েছে। এছাড়াও নানা ধরনের ফ্রোজেন ফুড রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ফ্রোজেন ফুড রপ্তানি হয়। বাজারে এখন জনপ্রিয় ফ্রোজেন খাবারের মধ্যে রয়েছে- পরোটা, আলুপুরি, ডালপুরি, বিফ ও চিকেনের নানা পদ। এছাড়া আরও রয়েছে রোল, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন নাগেটস, রুটি, স্প্রিং রোল, সসেজ, অনথন, পপকর্ন প্রভৃতি।
রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপে কথা বলে জানা যায়, মহামারিতে প্যাকেটজাত হিমায়িত খাবারের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে নগরজীবনে। পরিবারের অধিকাংশ মানুষ চাকরিজীবী। ফলে জীবনকে সহজ করতে নানা ধরনের প্রস্তুত ও আধা রান্না করা খাবার বিক্রি বেড়েছে।- জাগোনিউজ২৪.কম