বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন কোন নেতা মনে করেন আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষভাবে করার জন্য তারা অবশ্যই নির্বাচনীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। অন্য দিকে কারো কারো চাপ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য। ওই জাতীয় সরকার রূপরেখা কী হবে তা নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানাসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী ২/৩ জন নেতা এবং বিএনপি, বামধারার রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য ছোটখাটো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সমন্বয় জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। তবে ওই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কারপ্রপাপ্ত ড. ইউনুস অথবা ড. কামাল হোসেনকে করা যেতে পারে। ওই জাতীয় সরকার অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করবে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না সরাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠন করার বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন দেশবাসী দেখতে চায় না।’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অন্য রাজনৈতিক দলকেও অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। আর বিগত নির্বাচনে বিএনপি যে ভুল করেছে, তা আর করবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব শুধু একার নয় বিএনপির, প্রত্যেকটি নাগরিকের মন্তব্য করে মেজর হাফিজ বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। অতীতেও গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসককে বিদায় নিতে হয়েছে। আন্দোলন আরেকটি আপনারা দেখবেন। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। সভায় সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, কল্যাণ পার্টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকবে। জোট আরও শক্তিশালী হবে বলে তার আশা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার আদায় করতে শিগগিরই আওয়াজ তুলবে। কারণ তারা বুঝে ফেলেছে দলীয় সরকরের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘তদারকি সরকারের অধীন ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই এই দাবি আদায় করতে রাজপথে গণআন্দোলন গণসংগ্রাম সৃষ্টি করতে আলোচনা চলছে। তদারকি সরকারের কাঠামো কেমন হবে তা পরিস্থিতি বলে দেবে।’ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিক উল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিশেষ মহল থেকে জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনা উঠে এসেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা কিংবা বৈঠক হয়নি। হয়ত হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলদেশে বিদ্যমান যে শাসন চলছে সেটি ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসন। এটি চলতে থাকলে দেশের গণতন্ত্র, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সব কিছু নাই হয়ে যাবে। দেশে রাজনৈতিক নানা সমস্যা সৃষ্টি হবে, বিপদ হবে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রমুখী করতে এ সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।’ জুনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো ঠিক করা যায়। আর সরকার তা না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি সরকার গঠনের কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। জাতির সামনে জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার বিষয়টি রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। তার আগে সরকার আলোচনায় বসে এটি ঠিক করতে পারে।’
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনের ‘আওয়াজ’ তোলার পরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা না করলেও তারা সভাসমাবেশে-টেলিফোনে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করার দাবিতে আন্দেলনসহ রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করতে শুরু করেছেন। তারা যুগপৎ আন্দোলন করবেন নাকি একমঞ্চে বসে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ের জন্য লড়বেনÍ তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন।