রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

এখনও চলছে সিটিং সার্ভিস, নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীতে যাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হয়। গণপরিবহন যেন বর্ধিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু বাস এই নিয়ম মানলেও এখনও অনেক বাস সিটিং সার্ভিস চালু রেখেছে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। গতকাল সোমবার সকালে দিশারী পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদক। গন্তব্য রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর থেকে প্রেস ক্লাব। বাসে ওঠার আগে হেলপারকে ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ৩০ টাকা। পরে বাসে উঠে চার্ট খুঁজে দেখা যায়, মিরপুর ১ নম্বর থেকে প্রেস ক্লাবের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ টাকা। গেটলক সিটিং সার্ভিস এর কথা বললেও মিরপুর ১ নম্বর থেকে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরপর রাস্তায় যাত্রী ইশারা করলেই ব্রেক চাপছেন চালক। রাস্তা থেকে তোলা হচ্ছে যাত্রী। টেকনিক্যালের পার বাসের যাত্রী সংখ্যা গুনে ওয়েবিলে সিগনেচার করেন এক ব্যক্তি। তাকে হেলপার দেন ১০ টাকার একটি নোট। তারপর শুরু হয় হেলপারের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার কাজ। ভাড়া নিতে নিতে কল্যাণপুর যেতে না যেতেই রাস্তার মাঝখান থেকে আরও যাত্রী তোলা হয়। কল্যাণপুর কিছুটা অপেক্ষার পর শ্যামলী গিয়ে আবারও যাত্রীর অপেক্ষা। এর মধ্যেই শুরু হয় চালককে উদ্দেশ করে যাত্রীদের কথাবার্তা। গেটলক সার্ভিসের কথা বলে এখন কী সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্ন যাত্রীদের। সাজ্জাদ নামের এক যাত্রী বলছিলেন, ‘ভাবলাম একটু আগে যাওয়ার জন্য বাড়তি টাকা দিয়ে উঠলাম। এখন দেখি যেই লাউ সেই কদু। এরা কখনও মানুষ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘দায়িত্বরত বি আরটিএ চেয়ারম্যানকে শুধু টেলিভিশনের সামনে কথা বলতেই দেখি।’

মোতাহার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবহন মালিকরাদের নৈরাজ্যের বিষয়ে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নিতে পারছে না বি আরটিএ। বাস আসাদগেট-আড়ং সিগন্যালে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেও তোলা হলো আরও দুজন যাত্রীকে। যাত্রীর ওঠানোর পর আবারও বাকি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলা শুরু করলেন হেলপার। ধানমন্ডি ২৭ এ নেমে গেলেন দু’জন। সেখান থেকে যাত্রী তুললেন তিন জন। যে দুজন নেমে গেলেন তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে জনপ্রতি ৩০ টাকা করে। বাসযাত্রী কাইয়ুম বলছিলেন, ‘গতকাল থেকে তো রাজধানীতে কোনও সিটিং সার্ভিস নেই। তোমরা কেমনে চালাও।’ এই প্রশ্নের জবাবে ভাড়া তুলতে আসা হেলপার বলেন, ‘সব মালিকরা জানেন। আমাদের করার কিছু নেই। আপনার না পোষালে আপনি নেমে যেতে পারেন।’
আড়ং সিগন্যাল থেকে ওঠা দুজন নামবেন সায়েন্স ল্যাব। তাদের কাছ থেকেও ভাড়া চাওয়া হয় জনপ্রতি ৩০ টাকা করে। তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে যাত্রীরা চার্ট দেখতে চাইলে গাড়ির জানালয় ঝুলানো চার্ট দেখতে বলেন হেলপার। সেখানেও দেখা যায়, গাড়িটিকে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ফার্মগেট হয়ে গুলিস্তান যাওয়ার কথা থাকলেও, রূট পরিবর্তন করে মিরপুর ১ থেকে কলাবাগান-সাইন্সল্যাব-শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান যাচ্ছে। টানানো রয়েছে মিরপুর ১, ফার্মগেট, গুলিস্তানের ভাড়ার চার্ট।
গাড়ির চার্ট এবং রোড পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে দিশারী পরিবহনের চালক আশিক বলেন, ‘এটা মালিকরা ম্যানেজ করেছেন। আমরা শুধু গাড়ি চালাই। আমাদের চালাতে বলা হয়েছে। আমরা আর কিছু জানি না।’ বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় রফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলছিলেন, ‘তোরা কি তোদের আচরণ ভালো করবি না। লোকজনের কাছ থেকে এভাবেই বাড়তি টাকা নিবি গেটলক সার্ভিসের কথা বলে?’
শ্যামলী থেকে ধানমন্ডি ৩২ যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন খাইরুল। তিনি বলেন, ‘যেখানে আগে বাস ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখনও অনেক পরিবহন সিটিং সার্ভিসের নামে ২০ থেকে ৩০ টাকা আদায় করছে। এই এলাকায় বি আরটিএ’র কোনও অভিযান তো চোখে পড়লো না।’ কলাবাগান মোড়ে নেমে গেলেন কয়েকজন যাত্রী। এখান থেকে ওঠানো হলো আরও কয়েকজন যাত্রীকে। সায়েন্সল্যাব মোড়ে আরও কয়েকজন যাত্রী নেমে যাওয়ায় জাত্রীর জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন বাস চালক। বাসে অবস্থানরত যাত্রীদের কিছুটা উত্তেজিত আচরণের কারণে লেগে যায় চালকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক। এক পর্যায়ে চালক বাধ্য হয়ে থেমে থাকা গাড়িটি চালানো শুরু করেন। শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে আবারও চলে ওঠানো-নামানোর কাজ। মৎস্য ভবন পার হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে নেমে যাই। আর বাসটি তখন মতিঝিলের দিকে ছুটে চলে। সিএনজিচালিত বাসেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বাসের সামনে সিএনজিচালিত স্টিকার লাগানো থাকলেও তোয়াক্কা না করে হেলপাররা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এসব অরাজকতা ঠেকাতে বি আরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। করা হচ্ছে জরিমানা। তারপরও থামছে না নৈরাজ্য।
আজিমপুর থেকে ছেড়ে আসা আশীর্বাদ পরিবহনে সিএনজি চালিত স্টিকার থাকার পরও যাত্রীদের কাছ থেকে মিরপুর ১ নম্বর পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২০ টাকা। বাসের যাত্রী আলমগীর বলেন, ‘আমি একসময় হেলপারকে বলেছিলাম, সিএনজিচালিত বাসে বাড়তি ভাড়া কেন? হেলপার বলেন, ‘২০ টাকা দিতে হবে। কমে হবে না। কী আর করা চার টাকার জন্য আর কিছু বলিনি।’ এদিকে, বি আরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতে আশীর্বাদ পরিবহনের বাসটিকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ঠেকাতে বি আরটিএ ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। যেসব বাসে অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে, সেসব বাসকে আমরা আইনের আওতায় এনে জরিমানা করছি। অভিযানে দেখা যায়, অনেক সিএনজি বাস নতুন নির্ধারিত চার্জ অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছেন; যা ঠিক নয়, কারণ সিএনজিচালিত কোনও বাসের ভাড়া বাড়েনি।
পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ক বলেন, ‘যা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা হেলপার ও চালকরা নিচ্ছেন। এ বিষয়গুলো আমরা নজরে রাখছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ নিয়ে থাকে বাড়তি ভাড়া তাহলে তাদের চিহ্নিত করে কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা এসব বন্ধ করে দিতে সক্ষম হবো।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com