শান্তিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল পুরস্কারজয়ী নারীশিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, তিনি কখনোই বিয়ের বিপক্ষে ছিলেন না। শুধু বিষয়টি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ ছিল তার। এখন মনের মতো একজনকে বিয়ে করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছেন বলেও জানিয়েছেন এ তরুণী। চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্রিটিশ সাময়িকী ভোগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মালালা বলেছিলেন, আমি বুঝি না মানুষ কেন বিয়ে করে। কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইলে বিয়ের দলিলে কেন সই করতে হবে? এটি শুধু পার্টনারশিপ (অংশীদারত্ব) কেন হতে পারে না? এই মন্তব্যের জেরে সেসময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন পাকিস্তানি তরুণী। গত সপ্তাহে এক পাকিস্তানি যুবককে বিয়ে করেছেন জানানোর পর আবারও সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হন মালালা। অনেকেই তাকে ‘সুবিধাবাদী’, ‘ভ-’ বলে মন্তব্য করেন।
তীব্র সমালোচনার মুখে ভোগকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে স¤প্রতি মুখ খুলেছেন মালালা ইউসুফজাই। নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সদ্যবিবাহিতা বলেছেন, আমি বিয়ের বিপক্ষে ছিলাম না। এ নিয়ে আমার উদ্বেগ ছিল। বাল্যবিয়ে, জোরপূর্বক বিয়ের খবর বিশ্বজুড়ে অনেক মেয়ের জন্যই সত্য। গত রোববার (১৪ নভেম্বর) বিবিসি ওয়ানের ‘দ্য অ্যান্ড্রু মার শো’তে মালালা বলেন, বিয়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। পুরুষের তুলনায় নারীরাই বেশি মানিয়ে নেন। এসময় গোটা বিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নোবেলজয়ী তরুণী বলেন, এই প্রথার অনেকটাই পিতৃতন্ত্র এবং নারীবিদ্বেষ দিয়ে প্রভাবিত। সুতরাং আমরা যে ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করছি, তা নিয়ে এবং আমাদের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। তবে আমি ভাগ্যবতী যে, এমন একজনকে পেয়েছি যে আমার মূল্য বোঝে।
নিজের স্বামী সম্পর্কে মালালা বলেন, তিনি আমার রসবোধ বোঝেন এবং আমাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এর আগে, গত ৯ নভেম্বর টুইটারে নিজের বিয়ের কথা জানান মালালা। সেই টুইটে স্বামী ও মা-বাবার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেন তিনি। উচ্ছ্বসিত মালালা টুইটারে লেখেন, আজ আমার জীবনের মহামূল্যবান একটি দিন। আসার ও আমি সারাজীবনের জন্য গাঁটছড়া বেঁধেছি। আমরা বার্মিংহামের বাড়িতে বিয়ের ছোটখাটো আয়োজন করেছিলাম। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সামনের পথটুকু একসঙ্গে চলতে অধীর হয়ে রয়েছি।
জানা যায়, মালালার স্বামী আসার মালিক ২০১২ সালে পাকিস্তানের লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজম্যান্ট সায়েন্সেস (এলইউএমএস) থেকে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিসিএল) মুলতান সুলতানস দলের অপারেশনাল ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আসার। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকায় জন্ম নেওয়া মালালা তালেবানের বাধার পরও নারীশিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাওয়ায় ২০১২ সালে জঙ্গিরা তাকে গুলি করে। তিনি ২০১৪ সালে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। মালালা স¤প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট