ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে সরকার।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকারের সবশেষে প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
এনামুর রহমান বলেন, লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ১২ হাজার ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৩৩৬টি করা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জনকে নেয়া হয়েছে, এটাই এ যাবৎকালের ‘সর্বোচ্চ সংখ্যা’।
এছাড়া ৫ লাখ ১৭ হাজার ৪৩২টি গবাদিপশুকেও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জরুরি ওষুধসহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা এসেছেন তাদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করছি, আমরা আম্ফান থেকে রক্ষায় সর্বোচ্চ সফলতা পাব।
তিনি আরও বলেন, ১৪ হাজার ৩৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৭ লাখ ১৩ হাজার ৬০৭ জন মানুষকে রাখা সম্ভব ছিল। তবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অর্ধেক লোক রাখা হয়েছে।
এনামুর বলেন, ভাষাণচরের ১২০টি শেল্টারের মধ্যে একটিতে কিছু মানুষকে রাখা হয়েছে। তাদের তদারকিতে নৌবাহিনী রয়েছে, তাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুধবার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৩২) জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি বুধবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টা ২০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এমআর/প্রিন্স