রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন

ঋণ করে সংসার চালাই এটা সঠিক নয় : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অনেকে বলেন ঋণ করে সংসার চালায়, অর্থাৎ দেশ চালায়। ঋণ বেশি। এটা সঠিক নয়। দেশের জিডিপির তুলনায় বিদেশি ঋণ খুব কম। মাত্র ৩৬-৩৭ শতাংশ। এত কম ঋণ কোনো দেশের নেই। সেদিন বেশি দূরে নয়, সারা বিশ্বকে আমরাই ঋণ দেবো। ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া শুরু করেছি। মেগা প্রকল্পেও রিজার্ভ থেকে ঋণ পাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক মানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য পেশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাজমা বেগম। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট ও পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এতদিন যে উন্নয়নের সাফল্য পেয়েছি সেখানে সাধারণ মানুষের ভূমিকা ছিল। উন্নয়নের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার কৃষক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্প উদ্যোক্তারা যখন যে সুযোগ পেয়েছে তার পূর্ণব্যবহার করেছে। আর সরকার এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দিয়েছে। এটিই হলো বাংলাদেশের সাফল্যের মূলকথা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে মনে রাখতে হবে উন্নয়নের কৌশল সব সময় সমান উপযোগী হতে হয়। সময়ে সময়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন প্রয়োজনে করতে হয়। উচ্চফলন শষ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদেশে শ্রমবাজারের সুযোগ, তৈরি পোশাক রপ্তানি, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুযোগ এসব ছিল এর মধ্যে। এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় হলো- বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা আছে। এটা অন্য দেশের মানুষের মাঝে নেই। এই উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা একটা বড় শক্তি। এটা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে এসেছিল, এখনো আছে।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমি এই পুরস্কার নিতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছি, কারণ এই পুরস্কার প্রবর্তনের সঙ্গে আমি ও সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন যুক্ত ছিলাম। তবে স্বস্তির বিষয় হলো স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই পুরস্কার পাচ্ছি। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে দেড় দশক ছিলাম। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্বিতীয় কর্মস্থল বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছি, বিশ্ব অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে। এই উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জ আছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদ তৈরি করা। যাতে ডেমোগ্রাফিক সুবিধা নিতে পারি। প্রশাসনের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো। বিশ্ব আর্থিক অস্থিরতা সামাল দেওয়ার জন্য উন্নত মানের আর্থিক খাত গড়ে তোলা। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিশ্ববাণিজ্যে সুবিধা নিতে ও টিকে থাকতে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের আছে।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিভাবে হয়, এতদিন এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে এখন বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা প্রায় সবাই একমত যে, উন্নয়নের কোন ধরাবাঁধা ছক নেই। এমন কি বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালে এক প্রতিবেদনে বলেছে, একই নীতি ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ফলাফল দেয়। এজন্য অন্য দেশের মডেল অনুসরণ করে লাভ নেই। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের উন্নয়ন মডেল করতে হবে। আমাদের পূর্ব এশিয়ার টাইগার না হয়ে এজন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার হতে হবে। অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০১৭’ যৌথভাবে দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের ইমেরিটাস অধ্যাপক আজিজুর রহমান খান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেনকে (মরণোত্তর)। আজিজুর রহমান খান স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে সম্মান ডিগ্রি নেন। ১৯৭৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০৪১ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শ কমিটির চেয়ারম্যান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com