নিউজিল্যান্ডের মাটি অজেয়, দুর্ভেদ্য। আর সেটা ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটেই। যতবার বাংলাদেশ সেখানে সফর করেছে, কপালে জুটেছে হারের তিক্ত জ্বালা। প্রতিকূল পরিবেশ, তীব্র ঠাণ্ডা , কিউই পেসারদের আগুনে বোলিং; সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যেন এক বিধ্বস্ত পরাজিত সৈনিক। আবারো নিউজিল্যান্ড মিশনে গেছে বাংলাদেশ। খেলবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। প্রথম টেস্ট শুরু আগামীকাল শনিবার থেকে। সিরিজ শুরুর আগে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, হারের বৃত্ত ভাঙতে পারবে তো বাংলাদেশ?
কোটি টাকার এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আসলে কারো। কারণ এবার আরো ভঙ্গুর একটা দল নিয়ে নিউজিল্যান্ড গেছে বাংলাদেশ। নেই সাকিব, নেই তামিম। বাংলাদেশ দলও রয়েছে হারের চক্রে। বিশ্বকাপ থেকে শুরু, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ। টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ফরম্যাটে দুই জায়গাতেই হোয়াইটওয়াশ। এমন হারের ধকল কাটিয়ে কিইউদের বিরুদ্ধে ভালো করবে বাংলাদেশ? এমনটি ভাবা বোকামিই। ইতিহাস অন্তত তাই বলে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ এখন অব্দি নয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। হার প্রতিটিতেই। তাও যেনতেন হার নয়। এর মধ্যে পাঁচ ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হার। বাকি চারটির মধ্যে দুটিতে ৯ উইকেটের ব্যবধানে হার। একটি ১২১ রানে আরেকটি সাত উইকেটের হার। টেস্ট খেলার সংখ্যাটি ১০টি হতে পারত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। ২০১৯ সালে বন্দুকধারীর মসজিদে হামলার কারণে হয়নি ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতেও একই অবস্থা বাংলাদেশের। ১৬ ম্যাচের সবকটিতেই হার। এর মধ্যে ৮ উইকেট কিংবা তারও বেশি ব্যবধানে হার পাঁচটি। ১০০ রানের উপরের হারের ম্যাচ তিনটি। টি-টোয়েন্টিতে সাত ম্যাচের সাতটিতেই হার। সবগুলো হারই প্রায় বড় ব্যবধানে। সর্বনিন্ম হার ২৭ রানে। শনিবার থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইতে শুরু হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এই ম্যাচে তিন পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানোর আভাস দিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামার আগে ডমিঙ্গো জানান, নিউজিল্যান্ডের উইকেট ও কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে পেসারদের পাশাপাশি স্পিনেও গুরুত্ব দেয়া হবে। যদিও পরক্ষণেই জানালেন, ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের কথা মাথায় রেখে নেয়া হতে পারে একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার। ডমিঙ্গো বলেন, ‘এখনো উইকেট দেখিনি। উইকেট দেখার পর একাদশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিব। তবে আশা করছি ভালো উইকেটই পাব। তবে হয়ত পেস ও স্পিন দুটোকে গুরুত্ব দিয়েই একাদশ সাজাবো। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে উইকেটে কিছুটা স্পিন ধরবে।’ নিউজিল্যান্ডের অনভ্যস্ত কন্ডিশনে দল কেমন করে, তা দেখতে মুখিয়ে থাকা ডমিঙ্গো বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য তো একটু কঠিনই। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে স্পিন নির্ভর। তবে আমাদের দলে ভালো পেসার আছে। হয়ত ৩ পেসারের ওপর ভরসা রাখব। উইকেট দেখে নির্বাচকদের সাথে আলোচনা করব। তবে ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ হবে। তিন পেসার ও এক স্পিনার থাকতে পারে।’ নিউজিল্যান্ড শিবিরে অবশ্য নেই নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। নেতৃত্ব দেবেন টম লাথাম। দলে ফিরেছেন ট্রেন্ট বোল্ট ও ডেভন কনওয়ে। যা দলটিকে বাড়তি উজ্জীবিত করছে।
বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহীম, লিটন দাস, ইয়াসির আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেন/শরিফুল ইসলাম। নিউজিল্যান্ড দল (সম্ভাব্য): টম লাথাম (অধিনায়ক), উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, রস টেইলর, হেনরি নিকোলস, টম ব্লান্ডেল, ড্যারেল মিচেল, কাইল জেমিসন, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার, ট্রেন্ট বোল্ট।