সদ্যই সারাদেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। এতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। নয়টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
মাধ্যমিকে এমন ভালো ফলাফল করেও পছন্দের কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। এর মূল কারণ হিসেবে ভালো মানের কলেজ ও আসন সংকটের বিষয়টিই সামনে আসছে। আশঙ্কা রয়েছে, পছন্দের কলেজ না পেয়ে এ মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়ালেখায় অমোনযোগী হয়ে পড়তে পারে। এতে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার প্রতি তাদের চেষ্টা ও প্রতিযোগিতার মনোভাবেও পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে, সারাদেশে স্কুল ও কলেজ রয়েছে (যেখানে একাদশ শ্রেণি রয়েছে) এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৭৭৮টি। ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স কলেজসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে চার হাজার ৬৯৯টি। এর বাইরে আড়াই হাজারের বেশি মাদরাসা ও দুই হাজারের বেশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (যেখানে এইচএসসি (বিএম) পড়ানো হয়) রয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে আসন সংখ্যা রয়েছে ২৬ লাখ ৯ হাজার ২৪৯টি। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসএসসি-সমমানে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। সবাই মেধাক্রম অনুযায়ী নির্বিঘেœ ভর্তি হতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শুধু জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। শুধু জিপিএ-৫ নয়, এবার উত্তীর্ণদের মধ্যে ২৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর ফল জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫ এর মধ্যে। এসব শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া ছয় লাখের বেশি। যেহেতু শুধু ফলাফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ থাকছে, ফলে এসব শিক্ষার্থীদেরও চাওয়া থাকবে তুলনামূলক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। এতে নামিদামি কলেজগুলোতেও তুলনামূলকভাবে ভর্তির চাপ বাড়বে। শিক্ষাবোর্ডগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যে সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন (২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন), সে তুলনায় কলেজগুলোতে আসন খালি থাকবে পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৭০৩টি। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজ ও আসনের কোনো সংকট নেই। তবে ভালো কলেজের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচশ’র বেশি নয়। এবার যে সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে (এক লাখ ৮৩ হাজার), তার তুলনায় ভালো কলেজগুলোতে মোট আসন সংখ্যা এক লাখেরও কম। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৩০০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে চার লাখের মতো শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভালো কলেজে ভর্তির চাপ ও প্রতিযোগিতা সবসময় থাকবে। তাতে কেউ কেউ বঞ্চিত হবে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা হাতেগোনা কয়েকটি কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে। এ কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, দেশের সব কলেজে ভালো শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু সব কলেজ এতো সুপরিচিত না হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সেগুলোর দিকে বেশি মনোযোগী হয় না। ফলে সেসব কলেজে ভর্তি আবেদনও পড়ে কম। সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিকে যে পরিমাণ আসন সংখ্যা, তাতে কেউ ভর্তি বঞ্চিত হবে না। বরং প্রতি বছরের মতো এবারও কয়েক লাখ আসন খালি থেকে যাবে।
শনিবার থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া: গতকাল শনিবার ৮ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে একাদশে ভর্তির অনলাইনে www.xiclassadmission.gov.bd আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আবেদন ফি নির্ধারণ হয়েছে ১৫০ টাকা। এ প্রক্রিয়া শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি। এরপর যাচাই এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। দেশের কলেজগুলোতে মোট আসনের ৯৫ শতাংশ ভর্তিচ্ছু সব শিক্ষার্থীর আবেদনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেধার ভিত্তিতে ভর্তির পর বাকি ৫ শতাংশ আবেদন বরাদ্দ থাকবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। আগামী ২ মার্চ থেকে শুরু হবে একাদশ শ্রেণির ক্লাস।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে সর্বনি¤œ পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমান প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, সেগুলোর মধ্য থেকে মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
পছন্দের কলেজে ভর্তিতে অনিশ্চয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছর ভালো ফলাফল পেয়েও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় না। এবার ফলের সূচকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। তবে যথেষ্ট সংখ্যক ভালো মানের কলেজ না থাকায় ৩০ শতাংশ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হবে। এতে পড়ালেখার প্রতি অনেকের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবে ভাটা পড়তে পারে, যা তাদের আগামীতে এইচএসসির রেজাল্টে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছে, ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সারাবছর পড়ালেখা করেছে। সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেছে। কিন্তু ভালো ফলাফল করেও শেষ পর্যন্ত যদি পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ না হয় তবে তাদের অনেকে মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে।