নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারের নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে এ সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের বিচারক ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির সদস্যরা হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সংসদ প্রণীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের বিধান অনুযায়ী এ সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই সার্চ কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যপ্রণালি সম্পন্ন করবে। সেই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটির কার্য সম্পাদনের প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। শনিবার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটি আইন অনুযায়ী তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে ১৫ দিন সময় পাবে। ফলে নতুন কমিশন গঠনে বর্তমান কমিশনের মেয়াদের পরেও সময় থাকছে সার্চ কমিটির। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদ এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। উল্লেখ্য, আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগ দানের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে কিছুদিন এসব পদ শূন্য থাকলে আইনি কোন ব্যত্যয় হবে না। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে এ সার্চ কমিটি নতুন সিইসি ও ইসি নিয়োগে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই ৫ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা: সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে কয়েকটি যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো হলো: তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা: সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে। দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে। কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে। নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদ-ে দ-িত হলে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২–এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দ-িত হলে। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।
নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো: নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য কমিশনারের নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সার্চ কমিটির সভাপতির পদ পাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমার এবং সার্চ কমিটির সদস্যদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নিষ্ঠার সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব পালন করবো।’
শিগগিরই কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করার কথাও জানান আপিল বিভাগের এই বিচারপতি। সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রসঙ্গত, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। শনিবার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটি আইন অনুযায়ী তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে ১৫ দিন সময় পাবে। ফলে নতুন কমিশন গঠনে বর্তমান কমিশনের মেয়াদের পরেও সময় থাকছে সার্চ কমিটির। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদ এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
উল্লেখ্য, আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগ দানের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে কিছুদিন এসব পদ শূন্য থাকলে আইনি কোনও ব্যত্যয় হবে না। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে এ সার্চ কমিটি নতুন সিইসি ও ইসি নিয়োগে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ছহুল হোসাইন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। জরুরি জমানায় গঠিত নির্বাচন কমিশনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দীর্ঘ দিন জেলা জজ, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। এবার আবারও খবরে এসেছেন তিনি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন ছহুল হোসাইন। এ পরিস্থিতিতে পুরনো একটি খবরও আলোচনায় এসেছে। গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ছহুল হোসাইন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা জমাও দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সমকাল, বিডিনিউজসহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর প্রকাশতি হয়েছিল। সেসময় সমকালে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। গতকাল রোববার ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার পক্ষে তার এক আত্মীয় এ মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ খবর নিশ্চিত করে ছহুল হোসাইন বলেন, সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুরোধে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে তা পূরণ করে জমা দিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নির্ভর করছে। সেসময় ছহুল হোসাইন সমকালকে আরও বলেন, দশ বছর ধরে আওয়ামী লীগ দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ ফের আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, নির্বাচন করলে আশা করি বিজয়ী হতে পারব। তখন দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ বাড়বে। ছহুল হোসাইনের ভাতিজা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিলওয়ার হোসাইন সজীব বলেন, সিলেটের মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চান ছহুল হোসাইন। এ ভাবনা থেকে তিনি ভোটের মাধ্যমে রাজনীতিতে নামতে চান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসনটি উপহার দিতে পারবেন। যদিও ছহুল হোসাইন এখন নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করেছেন। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে শনিবার তিনি বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগের থেকে নির্বোচন করতে চেয়েছিলাম বলে আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। যখন নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম, তখন বিষয়টা ঠিক ছিল। এখন আর আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। পর্যবেক্ষকরা অবশ্য তার এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, দল না করলে তো কেউ দলীয় মনোনয়ন চায় না।