২০২২ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের ছাপার মান নিয়ে চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। বইয়ের ছাপার মান খারাপÍএমনটা বলে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারকেও বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা গেছে, এ বছর পাঠ্যবই বিতরণের শেষ পর্যায়ে একটি চক্র নি¤œমানের কাগজ দিয়ে প্রাথমিকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কিছু বই ছাপায়। সেগুলো বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) মান যাচাইয়ের জন্য প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর নামে জমাও দেয় তারা। বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজ পাওয়া মূদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মান যাচাই করে বই ছাড় করার ব্যবস্থা নিয়েছে এনসিটি। বই বিতরণ শেষ হওয়ার পর এখন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিছু বই নি¤œমানের কাগজে ছেপে গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রিপোর্ট করিয়ে অপ্রচার করালেই তা সত্য হয়ে যায় না। একটি সিন্ডিকেট দরপত্র জমা দিয়ে কাজ পায়নি। তারা এখন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে।’
বই ছাপার কাজ পাওয়া মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাব্বির খান বলেন, ‘তিন স্তরের পরিদর্শনের পর পাঠ্যবই ছাড় হয়েছে। কোনও প্রেসের পক্ষের নি¤œমানের বই দেওয়ার সুযোগই ছিল না। নি¤œমানের ছাপা হয়েছে এমনটা প্রমাণের চেষ্টা করছে কাজ না পাওয়া প্রতিষ্ঠাগুলো। সিন্ডিকেট করেও কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা। জাল বই নিজেরা ছেপে সেটা পরীক্ষা করালে সেই বই তো নিম্মমানেরই হবে।’
বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে জমা দিয়ে রিপোর্ট নিয়েছি। এখনও আমাদের কাছে ১০০ কপি আছে। আগামী রবিবার বা সোমবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবো।’
কোন উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বিস্তারিত পরে জানতে পারবেন।’জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) রুটিন দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘তিন স্তরে পরিদর্শন করে বই ছাড়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে মাঠ পর্যায় থেকে বই সংগ্রহ করে মান যাচাই করা হবে। মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ শতাংশ অর্থ এই পরিদর্শনের পর ছাড় করা হয়। যদি সেই পরিদর্শনে কোনও বই নি¤œমানের পাওয়া যায়, তাহলে মূদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার কাজে একটি সিন্ডিকেট প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু এনসিটিবি সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে। এরপর সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, করতোয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, বারোতোপা প্রিন্টিং প্রেস, সৃষ্টি প্রিন্টার্স, লেটার অ্যান্ড কালার প্রিন্টিং প্রেস, টাইমস মিডিয়া লিমিটেড, মোল্লা প্রিন্টিং প্রেস, মা সিস্টেম, ফাইভ স্টার ও সাগরিকা প্রিন্টার্স। সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করে মূল্যায়ন কমিটি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ায় সরকারের এ বছর বই ছাপা বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে। সিন্ডিকেটে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ না পেয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। উচ্চ আদালতে মামলাও করে তারা। মামলায় হেরে গিয়ে ফের অপপ্রচারে সক্রিয় হয়।