আন্তর্জাতিক চাপের সাথে সাথে দেশের ভিতরে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করলে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসতে বাধ্য হবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, ” আমি মনে করি সব ইলেকশন এমনকি এখন যে ইউপি ইলেকশনগুলি হচ্ছে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেকটা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই নির্বাচনগুলো যাতে সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হয়ে সেই প্রচেষ্টাই করতে হবে, না হয় গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়।” রাষ্ট্রপতির সংলাপ এবং সার্চ কমিটিতে নামের প্রস্তাব না দিলেও নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সরকারের কার্যক্রমে নজর রাখছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ বলছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে প্রায় এক যুগ ধরে।
সেই অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিও জোরালো করছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠনের চেয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে থেকে মাঠে নামার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৃহৎ ঐক্য গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু করবে বিএনপি। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সমর্থন না করলেও ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ’ এক কর্মযজ্ঞ কিভাবে সম্পন্ন হচ্ছে সে দিকে নজর রাখছে বিএনপি।
দলের নীতিনির্ধারণী ও দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নাগরিক সমাজ বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে যে নামগুলো প্রস্তাবনায় আসছে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া সার্চ কমিটি বাছাইকৃত যে নামের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে তা-ও যেন জনগণের সামনে আগে প্রকাশ করা হয়। এই দাবি সার্চ কমিটি কতটা বাস্তবায়ন করে তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। গতকাল সোমবার ছিল তাদের শেষ কার্যদিবস। পাঁচ বছর আগে আজকের এই দিনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন শপথ নিয়েছিল। কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন আইনে ১৫ কার্যদিবসের কথা বলা আছে। এখানে আরো কিছু দিন পাচ্ছে সার্চ কমিটি। তা ছাড়া বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও কোনো সঙ্কট তৈরি হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, বিএনপি এখনো সংলাপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাথে কথা বলেনি। তবে বিএনপির সাথে সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। যদি বিএনপি সংলাপ প্রক্রিয়া বিলম্ব করে তবে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেরাই আলাদাভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর কাজ করছেন বলে তারা জানান।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগেই বলেছি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যে আইন করা হয়েছে তা আমরা মানি না। এটি শুধু আমাদের কাছে নয়, দেশের মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়, গ্রহণীয় হতে পারে না। আর যে আইন মানুষ গ্রহণ করে না-সেটি কোনো আইনই নয়, সেটিকে কেউ মানবে না, তিনি বলেন, বিএনপি সময় মতোই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। এখন নতুন করে কিছু বলার নেই। সুশাসনের জন্য নাগিরকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঘোষিত সার্চ কমিটিতে যারা আছেন তারা একেবারে স্বাধীন, বিষয়টি এমন নয়। তারা রাষ্ট্রের কোনো কোনো লাভজনক পদে আছেন। সে ক্ষেত্রে একটা শঙ্কা আছে তারা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। নাকি সরকারের প্রস্তাবিত লোক নিয়োগ দেবেন? নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে তাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে অবশ্যই সততার ভিত্তিতে করতে হবে। এর মানদ-টা কী হবে, আসলে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।
আমাদের প্রস্তাবনা থাকবে যাদের নিয়ে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সেই ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার আগে জনমত যাচাইয়ে দিতে হবে। এরপরই চূড়ান্ত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। তাহলে স্বচ্ছতা আসবে এবং গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন সম্ভব।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের দাবি অব্যাহত আছে। নতুন ইসি গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে জনগণের অধিকার আদায় হবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। তিনি জানান, করোনার বিধিনিষেধ উঠে গেলে বিএনপির চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে, পাশাপাশি বৃহৎ ঐক্যের ঘোষণা দেয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে, এটা জনগণের কোনো কাজে আসবে না। এটা রাষ্ট্রেরও কোনো কাজে আসবে না। এই কমিশন গঠন হচ্ছে শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) অবৈধ কাজের বৈধতা দেয়ার জন্য। এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, এটা দেশের মানুষ এবং বহু রাজনৈতিক দলের দাবি। সুতরাং আগে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে সব কিছুই জনগণের ইচ্ছামতো করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন,য় বিরোধী দল ঐক্যবব্ধ হলে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মানতে বাধ্য হবে সরকার।