রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি ২১ বছর পর গ্রেফতার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন-হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা আজিজুল হক রানা শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে ২১ বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই দীর্ঘ সময়ে সে নিজের পরিচয় গোপন করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছে এবং বিয়ে করে সংসারও করছে।
এখনও এই মামলার দ-প্রাপ্ত চার জঙ্গি পলাতক রয়েছে। তারা হলো এনামুল, লোকমান, ইউসুস ও মোসায়েক। গতকাল বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গত ১ মার্চ রাজধানীর খিলক্ষেতের খিলক্ষেত বাজার মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে দুটি জিহাদি বই, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। আসাদুজ্জামান জানান, ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাড (ডহর পাড়া)’র পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে আসামিরা। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৪ জনের ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যার আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রদোহীর মামলায় প্রত্যেকের ২০ বছর করে সাজা হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচ জন পলাতক ছিল। তাদের মধ্যে মো. আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে (৪৪) গ্রেফতার করলো সিটিটিসি। তবে এখনও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চার জন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, গ্রেফতার রানা মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিল সে। বোমা দুইটি উদ্ধারের পর আজিজুল হক শাহনেওয়াজ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার আজিজুল হক রানা ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হয় এবং ওই মাদ্রাসার ওস্তাদ ও হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য মুফতি হান্নানের অনুসারী মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসে। মাওলানা আমিরুল ইসলাম তাকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ওই মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালামসহ হরকাতুল জিহাদের বিভিন্ন সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল এবং মাদ্রাসায় তাদের গোপন বৈঠক হতো।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতার আজিজুল হক সংগঠনে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেওয়ার জন্য হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় যায় এবং তালিম গ্রহণ করে। তালিম শেষে সেখানে সে বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য সাহসী জিহাদী বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক সংগ্রহ করার জন্য মাওলানা আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিলে আজিজুল হক রানাকে নির্বাচন করে মাওলানা আমিরুল ইসলাম। আমিরুল ইসলাম তাকে একটি চিঠি লিখে গোপালগঞ্জ বিসিক এলাকায় সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় পাঠায়। সেখানে চিঠি নিয়ে মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা করে সে। মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেয় এবং আজিজুল হকের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ‘শাহনেওয়াজ’ প্রদান করে।
পুলিশ আরও জানায়, আজিজুল হক নতুন নাম শাহনেওয়াজ পরিচয়ে আনুমানিক ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকেজিংয়ের কাজ করে। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পেছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পায়। কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলতো। বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হকসহ ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস প্রমুখ জড়িত ছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে শেখ হাসিনার সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাড (ডহর পাড়া)’র পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে তারা। আজিজুল হক রানার মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিল। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুইটি উদ্ধারের পর আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে এবং মাওলানা আমিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজিজুল হক দীর্ঘ ২১ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে এবং অত্যন্ত গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে টেইলারিং, মুদি দোকানদার, বই বিক্রেতা, ড্রাইভ্রার এবং সর্বশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করতো।’
তিনি বলেন, ‘রানা তার আসল পরিচয় গোপন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরা করে। দেশ ত্যাগ করার জন্য পাসপোর্ট বানানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে জেনে সে পাসপোর্ট বানানো থেকে বিরত থাকে। সে সর্বশেষ খিলগাঁও একটি রাবার স্ট্যাম্পের দোকানে কাজ করে। এখনও সে হুজির সাংগঠনিক কাজে যুক্ত ছিল। তার কাছ থেকে বিভিন্ন পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে।’ পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০০৭ সালে সে পরিচয় গোপন করে বিয়ে করে। সংসারও করে। এই দীর্ঘ সময়ে তাকে গ্রেফতার না করার পেছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কোন ব্যর্থতা নেই। আমরাতো তাকে গ্রেফতার করেছি। এটা সফলতা, বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার রানা বোমা তৈরিতে পারদর্শী। সে কাউকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা হবে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড পেলে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com