রাজবাড়ীফেরি সঙ্কট ও মাওয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ট্রাক ও বাস পারাপার বন্ধ থাকায় ওই চাপ এসে পড়েছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। তাই অতিরিক্ত চাপের কারণে রমজানের প্রথম দিনেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। গতকাল রোববার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে কয়েক শ’ যানবাহন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন শতাধিক ট্রাকের পাশাপাশি অন্তত ১০০টির মতো বাস পার হওয়ার অপেক্ষা করছে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে অপেক্ষমান গাড়ির সারি আরো র্দীঘ হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, অপেক্ষার সারি থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল মালামাল বোঝাই ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। পণ্যবাহী ট্রাকের বাড়তি চাপ থাকায় ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাতে নদীতে ডুবোচর থাকায় ফেরি কম চলে। এ জন্য ঘাটে প্রতিনিয়তই ট্রাকের দীর্ঘ সারি পড়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের চাপ কমাতে দৌলতদিয়া থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী শহরের দিকে কল্যাণপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার ট্রাকগুলোকে সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়। ট্রাকগুলোকে ফেরির জন্য সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং কোনো কোনো সময় এক থেকে দুই দিনও অপেক্ষা করতে হয়।
রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ সড়কের কল্যাণপুরে সিরিয়ালে বসে থেকে বেশির ভাগ ট্রাকচালকদের খোরাকির টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। সড়কে নেই কোনো খাবারের দোকান। নেই কোনো গোসল বা টয়লেটের ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতে চৈত্রের দাবদাহে তীব্র গরমে চরম বিপাকে পড়েছেন দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পার হতে আসা যানবাহনের চালক, সহকারী ও যাত্রীরা। দৌলতদিয়া ঘাট ও কল্যাণপুরে দুই দফায় সিরিয়ালে আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে তারা শুধু অসহায়ের মতো সময়ের প্রহর গুনছেন তারা।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কের কল্যাণপুর এলাকায় গত দুই দিন ধরে পাটের সুতা বোঝাই ট্রাক নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে যাবার জন্য সিরিয়ালে আটকা পড়েছেন ট্রাকচালক মো: আক্কাস মিয়া। তার গন্তব্য চট্টগ্রাম। কল্যাণপুর থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। গত দুই দিন ধরে তার ট্রাকটি দুই কিলোমিটারও এগিয়ে যেতে পারেনি। ট্রাকচালক মো: আক্কাস মিয়ার মতো শত শত ট্রাকের চালক তাদের ট্রাক নিয়ে আটকে আছে সিরিয়ালে। দিনের পর দিন সিরিয়ালে আটকে থেকে অলস সময় পার করছেন তারা। তাই চালক ও সহকারীরা পিচঢালা রাস্তায় বসেই পড়ছেন পত্রিকা।
রাজবাড়ী থেকে চট্টগ্রামগামী সুতা বোঝাই ট্রাকচালক মো: আক্কাস মিয়া বলেন, ‘গত দিন দিন ধরে রাস্তাতেই বসে আছি। ট্রাকের চাকা ঘুরছে না। সিরিয়াল থেকে তো একটা গাড়িও চলছে না। কবে যে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে পৌঁছে ফেরিতে উঠবো জানি না। এতো ভোগান্তি আর সহ্য হয় না।’
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী ট্রাকচালক মোহাম্মাদ বলেন, ‘নিজেদের এলাকায় বসেই যদি দুই দিন কেটে যায় তাহলে চট্টগ্রামে যাবো কবে? আসলেই কি ফেরি ১৭টা চলে নাকি কম চলে কে জানে সে কথা। রাস্তায় বসে আমরা পত্রিকা পড়ছি। গল্প করে সময় কাটাচ্ছি।’
হেলপার মো: তাজমুল সেখ বলেন, ‘রাস্তায় বসে বসে কি আর সময় কাটে। কল্যাণপুর এলাকায় বসায় রাখছে। রাস্তায় কোনো খাবারের দোকান নেই। গোসল বা টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা বড় অসহায়। সরকারের কাছে দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি কমানোর জন্য সহায়তা চাই।’
রাস্তায় বসে থাকা ট্রাকচালক মো: আকবার বলেন, ‘মাগুরা থেকে কলা বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছে ১০ ঘণ্টার মতো অপেক্ষায় বসে থেকে ফেরির কাছাকাছি আসতে পেরেছি। দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তির শেষ নেই।’ বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌ চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে ড্রেজিং করে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেরিগুলোকে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। ফলে ঘাট থেকে সড়ক উঁচু হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায়ও সময় বেশি লাগছে। সেই সাথে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। এসব কারণে বেশ কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানজট লেগেই থাকছে।