বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশ থেকে বিশেষ করে চীন ও বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। যার ফলে আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে। তবে ভাগ্য ভালো যে, এখনো বৈদেশিক মুদ্রা তথা রেমিট্যান্স-প্রবাহ এবং গার্মেন্টের অবস্থা ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু এই সরকারের মনিটারি বা ফিসকাল পলিসি ভালো নয়। বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকার ব্যাংক লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি হওয়ার মামলা যুক্তরাষ্ট্রের নিই উয়র্কের আদালত খারিজ করে দিয়েছে। একটা কথা খুব পরিষ্কার যে, যেখানে টাকা লুট হয়ে পাচার হয় সেখানে ব্যাংক ব্যবস্থা ফল করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো যেকোনো সময় ধ্বসে পড়বে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিককে এ কথা বলেছেন।
মহামারী করোনাভাইরাসের ধকল কাটতে না কাটতেই প্রায় দুই মাস ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নানাবিধ সঙ্কটে বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা। এ দিকে হঠাৎ করেই পাকিস্তানে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ইমরান খান। সবমিলিয়ে গোটা বিশ্বে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার মতো শোচনীয় অর্থনীতির ধাক্কা বাংলাদেশেও লাগবে এবং যেকোনো মুহূর্তে সরকারের ‘বায়বীয় অর্থনীতি’ ধসে পড়বে বলে মনে করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দলটির মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারকদের মতে, এই সরকারের মেগা প্রকল্পের উচ্চাভিলাষের কারণেই ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। এমনিতেই সরকারের লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। খাদ্যসঙ্কট, মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছে। দেশটির এসব সঙ্কটের জন্য সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে সরকার এ পরিস্থিতির জন্য করোনা মহামারীকে দায়ী করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অপ্রয়োজনীয় সব বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ করেছে। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭০০ কোটি ৬০ লাখ ডলার; কিন্তু ২০২০ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় মাত্র ২০০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই বর্তমান সঙ্কটের জন্য দায়ী। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রের দাবি- শ্রীলঙ্কায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় হয়েছে আকাশচুম্বী। খাদ্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ভ্যাকসিন ক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় ২৩ হাজার কোটি টাকার গরমিল রয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন ক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার নামে নিশিরাতের সরকার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ২৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। শুধু টিকা নয়, সুই কেনা থেকে শুরু করে কাঁথা বালিশ চাদর কিংবা হসপিটালের জানালার পর্দা কেনাকাটায় সরকারের লোকজন দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। সেখানে বিদেশ থেকে কঠিন শর্তে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ এনে কথিত মেগা প্রকল্প করছে। এই প্রকল্পগুলো মূলত লুটপাটের খনি। দফায় দফায় ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা ধারদেনা করে এনে নিশিরাতের সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে জনগণ ভয়াবহ উৎকণ্ঠায়। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মতো সব উপাদানই বিদ্যমান। বর্তমানে একটি শিশু ৯৮ হাজার টাকা ঋণ মাথায় জন্মগ্রহণ করে, এখন সেটি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ইতোমধ্যে আরো ছয় বিলিয়ন ঋণ নেয়া হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বলেছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বাংলাদেশকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ ২০২৩ সাল থেকে সব ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে, তখন শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বাংলাদেশে। রিজভী আরো বলেন, রেমিট্যান্স-নির্ভর অর্থনীতির ওপর ভর করে নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিদিনই দাবি করে বলছেন, বাংলাদেশে কখনোই শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে না। অথচ বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ নিয়ে শেখ হাসিনা শত শত মেগা প্রকল্প খুলেছে। সবগুলোই হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। বলা যায়, পুরো বাংলাদেশ এখন বিদেশীদের ঋণের জালে বন্দী। ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বও বন্দী। এরপর মেগা দুনীতি, অর্থপাচার ও মূল্যস্ফীতিতে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা আরো খারাপ। এটি রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে। সরকার এখন শুধু চাপার জোরে টিকে আছে। যেকোনো সময় বায়বীয় অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।