রেলখাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বিনিয়োগে খুশি কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা অনেক খুশি। কারণ এডিবি রেলখাতে ঋণ দিতে এক ধরনের ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে বসে আছে।
‘রেলে আমরা যা চাইবো তাই দেবে এডিবি। তারা বলে আসেন আপনাদের চাহিদা ফুলফিল করবো। যদি আপনারা যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব নিয়ে আসেন। আমাদের বোঝাতে হবে কী চায়, তখন যা টাকা লাগবে তা দেব আমরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ মে) পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এডিবি রেলখাতে ঋণ দিতে চায়। এতে আমরা খুশি কারণ রেলটাকে আমরা আধুনিক করতে চায়। মিটারগেজ রেলকে ডুয়েলগেজে রূপ দিতে চায়। পর্যায়ক্রমে সব রেলপথকে ডাবলগেজে করবো। রেলপথ ডাবলগেজ করলে কোথাও আসা যাওয়ার জন্য থামতে হবে না।
‘এটা একটা বিশাল কাজ। এখানে বিশাল বিনিয়োগের দরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের টাকা আছে অভিজ্ঞতা আছে। এডিবির আগ্রহের জন্য আমরা ধন্যবাদ দিয়েছি। এক সঙ্গে কাজ করবো। রেলকে আমরাও অগ্রাধিকার দিতে চায়। রেল সেকশন নিয়ে কাজ করতে চায়।’
রেলপথে এডিবি কী পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চায়? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঋণের নির্দিষ্ট ফিগার নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমাদের বলতে হবে আমরা কত টাকা চায়। আমরা যা চাইবো তাই দিতে রাজি আছে এডিবি। রেল অগ্রাধিকার আমরাও মনে করি এডিবিও মনে করে। বাংলাদেশের সমস্ত সিঙ্গেল গেজ রেলপথকে পর্যায়ক্রমে ডাবল গেজে রূপ দেবো। এডিবি আমাদের অবকাঠামোখাতে ঋণ দিতে চায়।
এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম সঙ্গী দাবি করে এম এ মান্নান বলেন, এডিবি আমাদের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী। বিশ্বব্যাংক বলুন, আইএমএফ বলুন, সবার আগে ঢাকায় আসন গেঁড়েছে এডিবি। স্বাধীনতার পর তারা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের থেকে এডিবি আমাদের বেশি টাকা ঋণ দিয়েছে। আমাদের ঋণের পরিমাণ বেশি। এডিবি আমাদের বহুমাত্রিক ঋণ দিচ্ছে। আমরা যেসব ক্ষেত্র পছন্দ করেছি যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, রেলখাতে তারা এগিয়ে এসেছে। এডিবির সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক।
ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমরা বছর বছর ঋণ পরিশোধ করছি। ঋণের কিস্তি দিতে কোথাও কোনো দিন ব্যর্থ হয়নি। আমাদের কখন রিমাইন্ডার দিতে হয়নি ঋণের কিস্তির বিষয়ে। যথাসময়ের আগেই আমরা ঋণ পরিশোধ করছি। কোভিডের সময় এডিবি আমাদের জরুরি সহায়তা দিয়েছে। এটা আমাদের খুবই প্রয়োজন ছিল। টিকা সংগ্রহ করতে এডিবি ঋণ দিয়েছে। শিক্ষা খাতেও এডিবি অনেক বড় অবদান রেখেছে। এ বছর বাজেট সহায়তা হিসেবে এডিবি ৫০ কোটি ডলার দেবে। আগামী বছরও একই পরিমাণে বাজেট সহায়তা করবে এডিবি।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এডিবির ৫০ বছরের সম্পর্ক। সামাজিক নিরাপত্বা, শিক্ষা, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থেকেছে এডিবি। নতুন করে রেলখাত ঢেলে সাজাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী এডিবি।
দেশের উন্নয়নে রেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হলে যেকোনো দেশের জন্য রেলখাত উন্নয়ন জরুরি। যেমন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যদি প্রাইভেট কারে যায় তবে কম করে হলেও ১০ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু রেলপথে এর অর্ধেক সময় লাগবে। তাই রেলপথ ঢেলে সাজাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী এডিবি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এডিবি’র দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের উপ-মহাপরিচালক মনমোহন প্রকাশ, বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং, ঢাকা অফিসের এডিবি’র বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার প্রমুখ।