সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
উলিপুরে তিস্তা নদীর চরে সবুজের সমারেহ দাগনভূঞা ভূমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ খুলনায় মাসব্যাপী একুশে বই মেলা শুরু শেখ হাসিনাকে দেশে এনে গণহত্যার বিচার করা ছাড়া বিএনপি ঘরে ফিরবে না-মামুনুর রশীদ মামুন শাহ এমদাদীয়া অটোমোবাইল ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলের সনদ বিতরণ গৌরীপুরে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন দুপচাঁচিয়ায় কিশোর ব্যাটমিন্টনে চ্যাম্পিয়ান সজিদ-সীমান্ত ধনবাড়ীতে ব্রোকলি চাষে সাফল্য, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের জনগণের সেবা নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করা একজন ইউএনও “রানীরবন্দরের ইতিহাস” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও দিনব্যাপী সাহিত্য আড্ডা-কবি ও বিশিষ্ট লেখক লুৎফর রহমানের

ভরা মৌসুমেও অস্থির চালের বাজার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ জুন, ২০২২

চলতি মাসের শুরুতে একজন ক্রেতা যে দামে চাল কিনেছেন, মাসের শেষে এসে চাল কিনতে গেলে তাকে বড় ধাক্কাই খেতে হবে। কারণ প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৯২ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অটো রাইস মিল মালিকরা চাল মজুত করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের সরবরাহ নেই। আগের অর্ডারের চালও ঠিকঠাক মতো পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে, মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন কম, ধানের দাম বাড়া, টানা বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বাড়ছে। দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এসময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ভরা মৌসুম হলেও রাজধানীর বাজারে প্রতিদিন দু-এক টাকা বাড়ছে চালের দাম। একই অবস্থা গ্রামগঞ্জের বাজারেও। দেশের অন্যতম চালের মোকাম নওগাঁ, কুষ্টিয়ার খাজানগর, দিনাজপুর ও ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের দামের এ চিত্র সম্পর্কে জানা যায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। ভালো মানের সরু (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়।

টিসিবির সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ড্যাম) হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একই সময়ের ব্যবধানে (গত এক সপ্তাহে) সব ধরনের চালের দাম কেজিতে গড়ে ৭ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে সরু চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। মালিবাগ চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেল এলাকায় চালের আড়তদার কুষ্টিয়া চাল ভান্ডারের সফিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চালের জন্য ফোন দিলেই মিল মালিকরা বলেন নেই। দাম বাড়িয়ে দিতে পারলে কিছুটা দিতে রাজি হয়। যদিও পরবর্তীসময়ে বাড়তি দামে ঠিকঠাক মতোই চাল দেয় তারা।’ কারওয়ান বাজারে চাল বিক্রেতা খাদেমুল ইসলাম বলেন, চালের সংকটের কথা চিন্তা করে সবাই স্টক (মজুত) করেছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করবে। ভরা মৌসুমে এত সংকট কখনো হয়নি। যদিও মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন কম ও ধানের দাম বাড়ায়, টানা বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম লায়েক আলী জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে বোরোর আগাম চালের সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। অন্যান্য বেশিরভাগ এলাকায়ও বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়েছেন। অনেকে এখনো ধান মিলে দেননি। আবার অনেক মিলে অপুষ্ট ধানের কারণে চালের পরিমাণ কমেছে। তারপরও মিলাররা সেভাবে চালের দাম বাড়াননি। মিলগেটে চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রিসভায়ও। সোমবার (৩০ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর কেউ চাল মজুত করে বাজার অস্থির করছে কি না, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর একথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে তেলের অবৈধ মজুত ঠেকাতে যেমন অভিযান হয়েছে, এখন চালের মজুত ঠেকাতেও তেমন অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। যদি কেউ এভাবে (নিয়মনীতি ভেঙে) অবৈধ চালের ব্যবসা করে বা মজুত করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চালের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গত সোমবার (৩০ মে) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি ‘বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায়’ যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করা না হলে দেশে খাদ্য সংকট হবে না। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যা করণীয় সবই করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকামে চালের দাম বেড়েছে। দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ায় মোকামে সরু চালের দাম তিনদিনের ব্যবধানে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। এসব মোকামে ভালো মানের মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪, মাঝারি মানের বিভিন্ন সরু চাল ৫২ থেকে ৫৭ এবং মোটা চাল ৪৯ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁর মোকামে মোটা চালের দাম (স্বর্ণা ও গুটি জাতের) কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়, যা আগে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ সাহা বলেন, শুধু মিল মালিকরা নন, চাষিরাও চাল অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বিক্রি করছেন। তারাও সংকটের শঙ্কায় মজুত করছেন। দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। সেজন্য মোকামে সরবরাহ কম। দাম বেশি। নওগাঁয় মোটা চালের পাশাপাশি মাঝারি (বিআর-২৮, বিআর-২৯) ৪৮ টাকা, সরু চাল হিসেবে পরিচিত জিরা নন-শর্টার ৬০ টাকা, জিরা শর্টার (মিনিকেট) ৬৪ টাকা ও কাটারি নন-শর্টার ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চালের দাম গত সপ্তাহেও ৩ থেকে ৫ টাকা কম ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের ধান কেনার প্রতিযোগিতা চলছে। বেশি দামে ধান কেনা হচ্ছে। মজুতপ্রবণতাও রয়েছে এ বছর।
যদিও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও এবার বোরোর ফলন গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ বছর বোরো উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার টন। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল ২ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার টন।
মন্ত্রণালয় বলছে, হাওরে বন্যা, সারাদেশে অতিবৃষ্টি, ঝড়, পাহাড়ি ঢলে ১৯ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে মোট ৭৯ হাজার ৬২৯ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমির ৭২ হাজার ১৫৭ টন ধানের। পাহাড়ি ঢলে ১ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ১৯৪ টন ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ায় ৬৫ হেক্টরে ২৭৮ টন ধানের ফলন কমেছে।-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com