সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

অগ্নিদুর্ঘটনা বিষয়ে বিশ্বনবীর বার্তা

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

আগুন মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আদিম মানুষের জীবনযাপনে একটি নাটকীয় পরিবর্তন এনেছিল। তাপ ও আলো প্রাপ্তির জন্য আগুন ব্যবহার করা থেকেই মানুষের পক্ষে খাদ্য রান্নার পদ্ধতি শেখা সম্ভব হয়েছে, যার মাধ্যমে একই সঙ্গে পুষ্টির বৈচিত্র্য ও প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খাদ্যে অবস্থিত অণুজীব হত্যার মাধ্যমে রোগব্যাধি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। আগুন থেকে প্রাপ্ত তাপ মানুষকে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে এবং শীতল জলবায়ুতে তাদের বসবাস করতে সক্ষম করে তোলে। এ ছাড়া আগুন নিশাচর শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। কিন্তু একটু অসতর্কতার কারণে এটি দানবীয় রূপ ধারণ করতে পারে, গ্রাস করে নিতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। প্রাচীন যুগে রাতের বেলায় চেরাগ ইত্যাদি থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত, এখনকার যুগেও বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রাতের বেলায় ঘটতে দেখা যায়। যেহেতু রাতের বেলায় বিদ্যুতের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি হয়। এ জন্য মহানবী (সা.) রাতে ঘুমানোর আগে এমন জিনিসগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সামলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলো রাতের বেলায় অগ্নিদুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দরজা বন্ধ করবে, পানির পাত্রের মুখ বাঁধবে, পাত্রগুলো উল্টে রাখবে কিংবা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে, বাতি নিভিয়ে দেবে। কেননা শয়তান বন্ধ দুয়ার খুলতে পারে না, মশকের গিঁট খুলতে পারে না, পাত্রের মুখও অনাবৃত করতে পারে না। (বাতি নিভিয়ে দেবে) কেননা দুষ্ট ইঁদুরগুলো লোকদের ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮১৯)
মহানবী (সা.)-এর সুন্নতগুলো পালন করলে রাত্রিকালীন অনেক দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ হওয়া সহজ হয়ে যায়। বর্তমান যুগেও রাতে ঘুমানোর আগে আমাদের ঘরের যেসব জিনিস রাতের বেলা বিপদের কারণ হতে পারে, সেগুলো সামলে ঘুমানো উচিত। স¤প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি গোটা দেশকে শোকাহত করেছে। এ ধরনের ঘটনা গোটা জাতির জন্য পরীক্ষা। মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বিপদাপদ দিয়ে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন, যারা তাতে উত্তীর্ণ হতে পারে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭) অতএব এই নির্মম দুর্ঘটনায় ভেঙে না পড়ে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। যাঁরা এই দুর্ঘটনায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাঁদের পরিবারকে সান্ত¡না দেওয়ার ভাষাও কারো জানা নেই। তবে তাদের জন্য মহানবী (সা.)-এর দুটি হাদিস উপস্থাপন করা যেতে পারে। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাবা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)
সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কত দয়ালু। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে, তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের একমুহূর্ত আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারো মৃত্যু যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন। উল্লিখিত হাদিসটি ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে এভাবে, জাবের বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮০৩) চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরাও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। মহান আল্লাহ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের শহীদি মর্যাদা দান করুন। তাঁদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাঁদের উত্তম প্রতিদান দিন। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সুস্থতা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ দান করুন। আমিন। এভাবে হজরত ইবরাহিম আ:কে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম বা মুসলমানদের চিরস্থায়ী আদর্শিক নেতা নিযুক্ত করা হলো। জ্যেষ্ঠ পুত্র হজরত ইসমাইল আ:কে সাথে নিয়ে তিনি হিজাজের মক্কা নগরীকে কেন্দ্র করে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষাকে বিস্তার সাধন করলেন। আর পিতা-পুত্র মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কাবা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করে দেন। খানায়ে কাবা সাধারণ মসজিদের মতো নিছক ইবাদতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দ্বীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচারকেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল।
এ কাবা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে এক আল্ল‍াহর প্রতি বিশ্বাসী সব মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সঙ্ঘবদ্ধভাবে এক আল্লাহর ইবাদত করবে, আবার এখান থেকে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে । বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হজ। এ ঘরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে হজরত ইবরাহিম আ:-এর দোয়া শুনুন- আল কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘এবং স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম দোয়া করেছিলেন- হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পূজার শিরক থেকে বাঁচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীতে চলবে- তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরুভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাজ কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এর দিকে দলে দলে চলে আসে এবং ফলমূল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করো। হয়তো এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৫-৩৭)।
এ সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন, ‘এবং স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম- এ কথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাজিদের জন্য পাক-সাফ করে রাখো। আর লোকদেরকে হজ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহ্বান জানাও, তারা যেন তোমার নিকট আসে, হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণের ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কোরবানি করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরকে খেতে দেবে’ (সূরা হজ : ২৬-২৮)।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com