বাংলাদেশে প্রকৃত আইনের হাতের চেয়েও অবৈধ ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গত বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এক সর্বনাশা সময় সৃষ্টি করেছে। বর্তমান এই ঘোর দুর্দিনে জনগণের জান-মাল এখন ভয়ানক বিপন্ন। তাদের অব্যাহত গুম, খুন, নারী শিশু নির্যাতনে সারাদেশে এক বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। সরকারের নির্দেশেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশে প্রকৃত আইনের হাতের চেয়েও অবৈধ ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই সকল হত্যাকাণ্ড। এর উপর দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে, তথাকথিত উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে, দেশ থেকে লাখ-লাখ কোটি টাকা পাচার করে অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে- যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ম। সমাজ থেকে ন্যায়বিচার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে সরকার প্রশাসনকে তছনছ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগ এখন সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হয়েছে মানুষের বাকস্বাধীনতা। মানুষের ভোটের অধিকার নেই, মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার নেই, দেশের সকল সেক্টরে এখন নৈরাজ্য চলছে।
তিনি বলেন, দেশের চারবারের সাবেক প্রধামন্ত্রী গণতন্ত্র উদ্ধার ও প্রতিষ্ঠার এক অবিসংবাদিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে প্রতিহিংসামূলক আওয়ামী বিচারের বন্দিশালায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে একের পর এক সাজা দেয়া হচ্ছে। এতেই দেশের বিপজ্জনক পরিস্থিতির উপলব্ধি করা যায়। আওয়ামী জীবনঘাতী ভাইরাস গোটা রাষ্ট্র ও সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন যেদিকে তাকানো যায় নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর প্রহসনের ছবি। শ্রীলঙ্কার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশেও বিদ্যমান। এই যখন দেশের অবস্থা তখন বাংলাদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে কিনা সেই আতঙ্ক থেকে বিরোধী দল নিধনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে কুড়িগ্রামের শফিকুল ইসলামকে। এসব হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, এক বৃহত্তর মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। মানুষ যাতে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস না পায় এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে সেই মরণবার্তা দেয়া হলো। তিনি বলেন, মূলতঃ পায়ের নিচ থেকে সরকারের মাটি সরে যাওয়া টের পেয়ে আওয়ামী সরকার দেশে এখন মৃত্যুদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজন-পোষণ, বিলাসী জীবনযাপন এবং বিপুল সম্পত্তি অর্জন সংকটাপন্ন হবে ভেবেই ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে সরকার মরণকামড় দিচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। তাই সহিংস রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হবে বাংলাদেশের মাটিতে। সময় আর বেশি নেই। এই সরকারের পতন আসন্ন।