নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই। দাম ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের এই বাজারে নতুন করে বেড়েছে কাঁচা মরিচ, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, আলু, লবঙ্গ ও শুকনো মরিচার দাম। যদিও গত এক বছরে প্রতি কেজি আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। প্রতি কেজি দেশি শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। গত এক বছরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। এভাবে অধিকাংশ পণ্যের দামই অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে অবিরাম পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে পেঁয়াজ আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২৬ শতাংশের বেশি। আলুর দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২৩ শতাংশের বেশি। আদার দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। তেজপাতার কেজিতে দাম বেড়েছে ২১ শতাংশের বেশি। এদিকে ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিক বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এক লাফে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। পাশাপাশি মুরগি এবং ডিমের দামও বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা তানিয়া সুলতানা বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে আয় বাড়ছে না। ফলে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদের আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
কাঁচা মরিচের দামের বিষয়ে গোপীবাগে বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, ঈদের পরে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম রয়েছে। এছাড়া কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে কাঁচা মরিচের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। ঈদের পর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ডিম। ঈদের আগে ১২০ টাকা বিক্রি হওয়া এক ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। আর বিভিন্ন মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। ঈদের আগে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১১ শতাংশের বেশি।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে রসুনও। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। সরকারি হিসাবে গত এক সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন শতাংশের বেশি। একইভাবে বেড়েছে আলুর দামও। এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার বেশি। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত এক সপ্তাহে খোলা ও প্যাকেট দুই ধরনের ময়দার দামই বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে খোলা ময়দা বিক্রি হয় ৫৮ টাকা কেজি দরে, তা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে এক টাকা। গত সপ্তাহে যে প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ৬৪ টাকা, এই সপ্তাহে সেই প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। নতুন করে বাড়ার তালিকায় রয়েছে শুকনো মরিচ। টানা তিন সপ্তাহ ধরে এই পণ্যটির দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে আমদানি করা যে শুকনো মরিচের দাম ছিল ৩২০ টাকা কেজি, এই সপ্তাহে সেই শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। এদিকে লবঙ্গের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকার মতো। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে লবঙ্গ বিক্রি হয় ৯৫০ টাকা কেজি দরে, এই সপ্তাহে সেই লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
এদিকে এক কেজি গাজর কিনতে ক্রেতাদের ১৮০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ঈদের আগে গাজরের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগে পাকা টমেটোর কেজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজিও ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মাছ বাজারে দেখা গেছে, পাঙাশ মাছের কেজি ১৫০ টাকা, কৈ মাছ ১৮০, সিলভার ১২০, শরপুঁটি ১৮০, তেলাপিয়া ১৬০, চিংড়ি ৫২০-৫৬০ টাকা, আর রুই মাছ ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। এছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা।