সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিম ও মুরগির দাম কমেছে। ডিম ডজনে ১০ টাকা এবং মুরগির দাম কেজিপ্রতি কমেছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। একইসঙ্গে কমেছে বেশকিছু সবজির দামও। গতকাল শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে কোনো কোনো মুদি দোকানে এক পিস ডিম ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ডিমের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী সবুর আলী বলেন, ঈদের আগে ও পরে ডিমের দাম বেশ বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ সেই ডিমের ডজন ১২০ টাকা। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। তিনি বলেন, সামনে ডিমের দাম আরও কমতে পারে। কারণ, গরমের কারণে এখন ডিমের চাহিদা কিছুটা কমেছে। খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. লিটন বলেন, গরমের কারণে একদিকে ডিমের চাহিদা কিছুটা কমেছে, অন্যদিকে বাজারে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। সবকিছু মিলেই দাম কমছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিম ডজনে ১০ টাকা কমেছে।
মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। আর পাকিস্তানী কক বা সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাসান বলেন, এখনো অনেকের বাসায় ঈদের মাংস রয়েছে। এ কারণে কিছুটা হলেও মুরগির চাহিদা কম। অন্যদিকে ঈদের পর বাজারে মুরগির সরবরাহ কম থাকলেও এখন বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা কমেছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন নতুন সবজি শিম। এক কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
শিমের দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে নতুন আসার কারণে এখন শিমের দাম একটু বেশি। দাম বেশি হলেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের ধারণা আরও কদিন শিম বাড়তি দামে বিক্রি হবে। এদিকে গত সপ্তাহে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। এখন এক কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। একইসঙ্গে কমেছে টমেটোর দামও। গত সপ্তাহে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে।
গাজর ও টমেটোর পাশাপাশি কমেছে বরবটির দাম। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটি এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কমেছে শসার দাম। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় আরও রয়েছে করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁচ কলা। বাজারে করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা এ সবজিগুলো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচ কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ঢ্যাঁড়সের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢ্যাঁড়স এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ঈদকেন্দ্রিক চাহিদা বাড়ায় গাজর, টমেটো ও শসার দাম অনেক বেড়ে যায়। এখন এসব সবজির চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফলে দামও কমেছে। তিনি বলেন, বাজারে নতুন সবজি আসতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে শিম চলে এসেছে। পটলের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। যে কারণে পটলের দাম বেশ কম। আমাদের ধারণা কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি সবজির দাম কমতে পারে। সকালে মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আর পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। ঈদের পর এসব মাছের দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশেরও। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।