রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ অপরাহ্ন

আমদানিনির্ভরতাই বর্তমান বিদ্যুৎ-সংকটের কারণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানি জোগান না বাড়িয়ে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম। ম তামিম বলেন, ‘সরকার বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির জোগান দিতে না পারায় এ সমস্যা হয়েছে। দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ আনার জন্য এক সময় তেলভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। তবে সেটাকে তিন বা পাঁচ বছর পর্যন্ত রাখার পরামর্শ ছিল। কিন্তু সেটা না করে এখন পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে তেলের ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। আর তেলের ওপর এই নির্ভরতার কারণেই বর্তমান সমস্যা তৈরি হয়েছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে গতকাল রোববার আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনা ও মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ম তামিম। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের স ালনায় অনুষ্ঠানে সামষ্টিক অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ব্যাংকিং খাত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বহিঃখাত নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে ম তামিম বলেন, দেশে যখন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু হয়, তখন কয়লা ও তেল আমদানি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। একই সময়ে উচিত ছিল নিজেদের গ্যাসের জন্য অনুসন্ধান চালানো। সেটি হয়নি। পরবর্তীকালে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা-ও অনেক দেরি করে নেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের রাজনৈতিক সাহস কোনো সরকারই নিতে পারেনি।
বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে উল্লেখ করে ম তামিম বলেন, দেশে যেকোনো সময়ে উৎপাদন কমে যেতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্যাস ও তেল আমদানি নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেশি ছিল। যুদ্ধের কারণে দাম আরও বেড়েছে।
ম তামিম আরও বলেন, ‘ইউরোপ এখন রাশিয়ার ওপর থেকে গ্যাসনির্ভরতা কমাচ্ছে। এ জন্য সারা বিশ্বে যত জায়গায় যত গ্যাস আছে, তা নিতে ইউরোপ হাত বাড়াবে। সে জন্য আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারব কি না। পাশাপাশি কয়লার ওপর নির্ভরতা অব্যাহত রাখাটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। আরেকটি আশা হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সার্বিকভাবে সাশ্রয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের চাহিদা কমিয়ে আনতে পারি।’
এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের কিছু কার্যক্রম ভার্চুয়ালি এবং সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১৮ জুল্ইা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ধৈর্য্য সহকারে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। সবাইকে নিজ উদ্যোগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্র, যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারাও লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে, জাপানে হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে বরাদ্দ থাকা সত্বেও, ব্যাংকে অর্থ থাকা সত্বেও সংবরণ করছে। আজকের আলোচনার একটা মুখ্য বিষয় হচ্ছে যে আমরা আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে কমিয়ে আনব, যাতে আমাদের খরচ কম হয়।” এর অংশ হিসেবে ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত করার পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও বিদ্যুতের ব্যয় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তৌফিক এলাহী চৌধুরী বলেন, সারাদেশে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এই ঘাটতি অ লভিত্তিক ভাগ করে নিতে হবে। তাতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোনো কোনো জায়গায় দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, তখন আমরা ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলাম। সেই যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি বিধায় এই যুদ্ধ আমাদের জন্য তুলনামূলক সহজ। এই যুদ্ধে আপনারা সবাই অংশ নেবেন।
তিনি জানান, কীভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো যায় বৈঠকে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা, অফিসে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, প্রয়োজনে বাসা থেকে ভার্চুয়ালি অফিস করা, সরকারি গাড়িতে বেশি লোক পরিবহন করাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। “দোকানপাট শপিংমল বন্ধ থাকবে, এসিগুলো যেগুলো চলে, সেটা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হবে, কেউ যদি এসব আদেশ অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব। “আমরা হয়তো কারপুলিং শুরু করব যাতে দুই-তিনজন মিলে এক গাড়িতে আসতে পারি অফিসে। সরকারি সভাগুলো কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করব, সভাগুলো অনলাইনে করার চেষ্টা করব।”বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সেই সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে আমরা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে চলে যাচ্ছি। সেটা আমরা আগে থেকে জানিয়ে দেব। বিশেষ করে গাড়িতে যাতে তেল কম ব্যবহার করা হয় সেজন্য কিছু মেজারস নেওয়া হচ্ছে। সেটা পর্যায়ক্রমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এটা খুব দীর্ঘমেয়াদী নয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোন এলাকায় পর্যায়ক্রমে কতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে না, সেটা বিতরণ কোম্পানিগুলোর জানিয়ে দেবে। শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরা বিত্যুৎপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে, এরপর অন্য গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাবে।
সবাইকে ধৈয্য ধরে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে শুরু হওয়া এই বিশেষ পরিস্থিতি থেকে অচিরেই আমরা মুক্তি পাব বলে আমি আশা করি।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার সকাল ১০টার আগে থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ শুরু হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, কুইকরেন্টালের নামে বিদ্যুৎখাত থেকে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে। এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। তাই তারা জনগণের টাকা দুর্নীতি ও লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com