শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

বিপর্যয়ের মোকাবেলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

সম্পাদকীয়
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০

 

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বড় বিপর্যয়। শেয়ারবাজার ধুঁকছে, তেল-গ্যাসের দাম নিম্নমুখী, একেকটি দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) রীতিমতো ধস নামতে বসেছে বলা যায়। করোনা মহামারিতে অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার কিছুটা নমুনা দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি খাতের হিসাব থেকে। প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে,মহামারির কারণে গত মার্চেই যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা পণ্য বিক্রিতে ধস নেমেছিল। এপ্রিলেও অব্যাহত ছিল সেই ধারা। ওই মাসে দেশটিতে খুচরা পণ্য বিক্রির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১৯৯২ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে সর্বনিম্ন।এর মধ্যে খনন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সবধরনের পণ্য উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প উৎপাদন কমার হার ছিল ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের চেয়েও বেশি। আর এপ্রিলের উৎপাদন সংকট ছাড়িয়ে গেছে সর্বকালের রেকর্ড। ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময়েও এতটা উৎপাদন হ্রাস পেতে দেখা যায়নি সেখানে। এটি থেকে বেশ সহজেই কোনও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ধারণা পাওয়া যায়। অন্যান্য খাতের মতো চাকরির ক্ষেত্রেও বিশাল সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক মাসে কোটি কোটি মার্কিনি কাজ হারিয়েছেন। দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মহীনদের জন্য দেয়া হয় এই সহায়তা। সবশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭০-এর দশকে বা ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় দেশটিতে বেকার হয়ে পড়া ব্যক্তিরা তাদের আয়ের অনুপাতে যে পরিমাণ সহায়তা পেয়েছিলেন, এবারের করোনা মহামারিতে পাচ্ছেন তার চেয়ে অনেক কম। যদিও, ওই সময়ের তুলনায় এখন বেকারত্বের হার অনেক বেশি। এপ্রিলে বেকারত্ব সুবিধাভোগীদের হিসাব এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে ওই তালিকাভুক্তরা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা কম আলোচনা হলেও এ থেকেও কোনও দেশের অর্থনেতিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। কতটুকু সময়ের মধ্যে ভোক্তারা এক ডলার ব্যয় করছেন তা হিসাব করে অর্থপ্রবাহের গতি নির্ধারিত হয়। সময় যত বেশি হবে, সেখানকার অর্থনীতি ততটা দুর্বল বলে বিবেচিত হবে। বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপ্রবাহের গতি কমছে, তবে ২০১৭ সালে কিছুটা ভালো অবস্থায় দাঁড়ালেও করোনা মহামারির আঘাতে সেটিও উড়ে গেছে। অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে প্রণোদনা দেয়ায় ‘ব্যালেন্স সিট’ ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। তবে করোনা মহামারিতে অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় তারল্য সংকটে পড়েছে তারা। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডই কিনছে না, পাশাপাশি করপোরেট বন্ড, এমনকি ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড) বন্ডও কিনছে। এখন কী হবে? করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু মানে আরও বেশি মৃত্যু ও সংক্রমণ ঘটানো। এতে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কী হয়েছে, কেন হয়েছে-এসব পুরনো বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটিতে অর্থনীতির তেমন কোনও লাভ হবে না। তারচেয়ে সুপরিকল্পিতভাবে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রেখে যত দ্রæত সম্ভব অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
তাদের মতে, সেলুন, রেস্টুরেন্ট, স্পোর্টস ভেন্যু খুলে দেয়ার চেয়ে অর্থনীতির গতি ফেরানোর আরও ভালো কিছু উপায় রয়েছে। যেমন- চাকরির ক্ষেত্র সচল করতে ওয়্যারলেস ও ইন্টারনেট সংযোগের উন্নতি, জ্বালানি খাতের সংস্কার, চাকরির বয়স অবকাঠামো পুনর্গঠন, যতদিন সম্ভব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখে এর কর্মীদের স্বাস্থ্যকর্মীতে রূপান্তর (যেমন- করোনা টেস্ট করা) বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনশীল কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রভৃতি। করোনা মহামারিতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান সংস্থাগুলো। তবে, যাত্রী পরিবহন কমে যাওয়ায় তাদের কার্গো-সেবার কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাপি এই চলমান সঙ্কট উত্তরণে আমাদেরকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com