সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

অন্য নারীকে বিয়ে করায় অটোচালককে হত্যা করে পোশাক শ্রমিক আহিনা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

অটোরিকশাচালক আলী নূর (৩০) হত্যার ঘটনায় পোশাক শ্রমিক আহিনা খাতুনকে (২৯) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আহিনা র‌্যাবের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মোজাম্মেল হক জানান, ঢাকায় পোশাক শ্রমিক আহিনা খাতুনের (২৯) সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় বসবাস করছিলেন হত্যাকাণ্ডের শিকার অটোরিকশাচালক আলী নূর (৩০)। তিন বছর ধরে তারা এভাবে আশুলিয়ার বিভিন্ন বাসায় ভাড়া ছিলেন। কথা ছিল একদিন তারা বিয়ে করবেন। কিন্তু আলী নূর গত ১৪ জুলাই তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা গিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করেন। এরপর ১৭ জুলাই আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। এ নিয়ে আহিনার ক্ষোভ ছিল, তবে আলী নূরকে তা বুঝতে দেননি তিনি। তিনি আলী নূরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তাকে হত্যা করে বাসায় তালা দিয়ে বের হয়ে যান আহিনা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাব-৪ এর হাতে তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। স্বীকার করেছেন হত্যার কথা।
আহিনা খাতুন র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, প্রায় তিন বছর আগে আলী নূরের সঙ্গে তার পরিচয়। তাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা দুজনই একসঙ্গে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তবে তার বক্তব্য অনুযায়ী, গত ৩ বছরে তারা ৫ বার বাসা পরিবর্তন করেন। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ২৯ জুলাই আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস শুরু করেন তারা। গত ৩০ জুলাই রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু আহিনা ঘুমের ভান করে থাকেন। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তিনি সেদিন ভোরে ভিকটিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় বঁটি দিয়ে মাথা, গলা ও বুকে কুপিয়ে হত্যা করেন। আসামির বক্তব্য অনুযায়ী, রক্তাক্ত লাশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে যান এবং লাশটি কাঁথা চাপা দিয়ে রাখেন। পরে তার থালা-বাসন, কাপড় চোপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বস্তায় ভরে ভোর ৬টার দিকে ঘরে তালা দিয়ে বস্তা নিয়ে হেটে প্রথমে জিরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। সেখান থেকে বাসে আবদুল্লাহপুর আসেন। আব্দুল্লাহপুর কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বাসে কুড়িল বিশ্বরোড যান। পরে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় আসেন। সেখানে আসামি আহিনা নিজেকে চাকরিপ্রত্যাশী পরিচয় দিয়ে ২ হাজার ২০০ টাকায় বাসা ভাড়া করেন। মজিবুর রহমান নামে একজনের সহযোগীতায় ওই টিনশেড বাসায় ওঠেন এবং আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
মোজাম্মেল হক হত্যাকা-ের পর অস্থির হয়ে পড়েন আহিনা। পরে তিনি বিবেকের তাড়নায় ৩১ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে আলী নূরের মোবাইলের মাধ্যমে তার ভগ্নিপতি জাকিরকে জানান যে, আলী নূর অসুস্থ, তাকে বাঁচাতে তার পরিবার যেন দ্রুত আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার বাসায় যান। ১ আগস্ট দুপুর সোয়া আড়াইটার দিকে আলী নূরের পরিবারের লোকজন জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর ভাড়া দেওয়া টিনশেড বাসায় গিয়ে দেখতে পান রুমের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। তারা বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভেতর হতে তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়ে আসে। তারা মেঝেতে কাঁথা দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় আলী নূরের লাশ দেখতে পান। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘরের তালা ভেঙে লাশটি উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে ২ আগস্ট তার বড়ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব-৪ আসামিকে গ্রেফতারে ছায়াতদন্ত শুরু করে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আহিনা খাতুনকে মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অভিযুক্ত নারী স্থানীয় নীলফামারীর একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ২০১২ সালে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার প্রথম বিয়ে হলেও পারিবারিক কলহের জেরে দেড় বছর পর বিচ্ছেদ ঘটে। পরিবারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে জীবীকার তাগিদে তার সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন তিনি এবং আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে অটোচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com