বৃটেনের সাবেক ট্রেজারি মিনিস্টার এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক এখন মহা দুশ্চিন্তায়। কেননা একের পর এক তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করছে বৃটেনের সংবাদমাধ্যমগুলো। স্থানীয় সময় শনিবার দ্য মেইল অন সানডেকে উদ্ধৃত করে ডেইলি মেইল অনলাইন জানিয়েছে, গত মাসে ঢাকা সফর করেছে বৃটেনের জাতীয় অপরাধ তদন্ত সংস্থা (এনসিএ)। এসময় বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী তদন্তকারীদের সঙ্গে অত্যন্ত গোপনে একটি বৈঠক করেছে সংস্থাটি। মূলত টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতেই বৃটেনের গোয়েন্দারা ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
ডেইলি মেইল বলছে, এ তথ্য সামনে আসার পর এখন বৃটেনের তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ টিউলিপের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইমেইল রেকর্ড খতিয়ে দেখতে চাইতে পারে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের সন্মুখীনও হতে পারেন হাসিনার ভাগ্নি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা সহ তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতিদমন কমিশন। রাশিয়ার মালিকানাধীন রোসাটম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণে নির্মিত হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০১৩ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি ছবিতে টিউলিপকেও দেখা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশের সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপের ‘বিচার’ করার প্রস্তাব দিয়েছে বৃটেনের তদন্তকারী সংস্তা এনসিএ। সূত্রটি বলছে, বৃটেনের হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা শুরু করতে পারে বৃটেনের গোয়েন্দারা।
কোনো বৃটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে যদি বিদেশে ঘুষ নেয়ার বিষয় প্রমাণিত হয় তাহলে ২০১০ সালের ঘুষ আইনের অধীনে তার বিচার করে বৃটেনের সরকার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির দশ বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা জানিয়েছে ঢাকার অনুরোধেই গোপনে ওই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন বৃটিশ তদন্তকারীরা।
কয়েক সপ্তাহ সহিংস বিক্ষোভের পর আগস্টে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। তার পতনের পর দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করেছেন বৃটিশ তদন্তকারীরা। শেখ হাসিনা ছিলেন একজন স্বৈরশাসক- যাকে রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন টিউলিপ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হাসিনা। তার শাসনামলে প্রতি বছর দেশ থেকে ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃটেনের অপরাধ তদন্ত বিষয়ক গোয়েন্দারা প্রথম ঢাকা সফর করেছিলেন গত অক্টোবরে। তখন বাংলাদেশ থেকে লুট হওয়া কোটি কোটি টাকা উদ্ধারে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। কেননা হাসিনার মিত্ররা লুট করা অর্থ বৃটেনে পাচার করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এবারের বৈঠকে এনসিএ’র সদস্যরা টিউলিপের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্পর্কে জানতে চান।
প্রসঙ্গত, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ডেইলি মেইলে প্রকাশ হওয়ার কয়েক দিন পরই দুর্নীতিদমন মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। এর কয়েকদিন পর হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রসে দুই শয়নকক্ষ বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট উপঢৌকন পাওয়ার খবর প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। পরে দ্য মেইল অন সানডে পত্রিকার খবরে প্রকাশ করা হয় ২০২২ সালে কীভাবে উপঢৌকন পাওয়া ফ্ল্যাটের বিষয়য়ে মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ। উপহার পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে টিউলিপ তখন বলেছিলেন ফ্ল্যাটটি তাকে তার বাবা-মা কিনে দিয়েছে।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ এখনও অস্বীকার করছেন টিউলিপ। বর্তমানে বৃটেনের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য তিনি। তার দল টিউলিপের পক্ষ নিয়ে বলেছে, এনসিএ অথবা বাংলাদেশের কোনো তদন্তকারী এখনও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এনসিএ কর্তৃপক্ষ।