চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে মায়ের হাতে নির্যাতিত শিশু ফাহাদকে (২) চট্টগ্রামের ‘ছোটমনি নিবাসে’ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের শিশু আদালতে ভুক্তভোগী শিশুটিকে হাজির করলে বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এ নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান জানান, মায়ের হাতে নির্যাতিত শিশুটিকে পরিচর্যা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কে নিবে এই সিদ্ধান্ত জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর আদালতে ওই শিশুটিকে হাজির করানো হয়। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রামের ‘ছোটমনি নিবাসে’ পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুটিকে চট্টগ্রামের রৌফাবাদ ছোটমনি নিবাসে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরো জানান, স্বামীর সাথে রাগ করে দুই বছরের শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন রশিদ ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে নিয়ে শিশুটির নানার বাড়ি উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারের বাড়িতে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
গত বুধবার দুপুরে শিশুটির মা পারভীন আক্তারকে (২৩) আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায় এবং নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে ওই আদালতে হাজির করা হলে শিশুটির দাদা আবদুল করিম ও খালা নুরজাহান আক্তার তাদের জিম্মায় ফাহাদকে নেয়ার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী শিশুটির কল্যাণার্থে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে চট্টগ্রামের ‘ছোটমনি নিবাসে’ রাখার নির্দেশনা দেন।
আদালতের অপর নির্দেশে শিশুটির মা পারভীন আক্তারকে জামিন দেয়া হয়েছে বলে তিনি যোগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন রশীদ জানান, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক শিশুটিকে নিরাপদে চট্টগ্রামের ‘ছোটমনি নিবাসে’ পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তারের (২৩) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারী গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সাথে তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফাহাদ (২) নামের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে স্ত্রী পারভীন আক্তার বাবার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। চাঁদপুর লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সিদ্ধান্তমতে ভরণপোষণ বাবদ প্রতি মাসে স্বামীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতে পারায় সম্প্রতি পারভীন তাদের দুই বছরের শিশুসন্তানকে নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠান। শিশুটির বাবা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন জনকে অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে আসে।