বিশ্বব্যাপী একটি আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ক্যাশলেস লেনদেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড। ডিজিটাল লেনদেনে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ফিচার যোগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কাজ করছে শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতি গড়তে। ২১০টিরও বেশি দেশ ও অ লজুড়ে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে মাস্টারকার্ড একটি টেকসই বিশ্ব তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা সবার জন্য খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। ‘এমন একটা পৃথিবী যেটা নগদ টাকা ব্যবহারের বাইরে থাকবে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, সেদিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি।’ মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের এই কথায় সেটা স্পষ্ট। মাস্টারকার্ড ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মাধ্যমে কার্ড সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের কার্ড ইস্যু করছে। সরাসরি কোনো কার্ড এরা ইস্যু করে না। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্ড ইস্যু করে। মাস্টারকার্ডের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়। মাস্টারকার্ডে দেশ-বিদেশে গ্রাহকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডেরই রয়েছে সবচেয়ে বড় মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক। সামনে বেশ কিছু প্রযুক্তি আসবে। এটা মানুষকে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। সামনে আমরা কাজ করতে চাচ্ছি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) নিয়ে। সেখানে আমরা আরও নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসবো।
দেশে মাস্টারকার্ডের আসন্ন কর্মসূচি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে আমাদের অফিসের প্রায় ৯ বছর হয়েছে। আমরা একমাত্র নেটওয়ার্ক যারা ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে লোকাল অফিস দিয়ে কাজ করছি। আমরা কিন্তু রেগুলার ব্যবসা, ডেভিড, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের ক্ষেত্রে প্রচুর উদ্ভাবন করেছি। বাংলা কিউআর যেটা বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে সেটা আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস (এমএফএস) ও কার্ড ব্যবসার সঙ্গে একটা সংযুক্তি করেছি ২০১৯ সালে। ফলে মাস্টারকার্ড থেকে এমএফএস ওয়ালেটে টাকা তাৎক্ষণিকভাবে ট্রান্সফার করা যায়। অতিসম্প্রতি আমরা এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রেডিট কার্ডের বিল পেমেন্ট চালু করেছি। সামনে বেশ কিছু প্রযুক্তি আসবে। এটা মানুষকে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। সামনে আমরা কাজ করতে চাচ্ছি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) নিয়ে। সেখানে আমরা আরও নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসবো। কার্ড যে ব্যবহার করবে সেটাকে কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায় এবং নতুন টেকনোলজি আনা যায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করবো। আমরা মনে করি এমন একটা পৃথিবী যেটা নগদ টাকা ব্যবহারের বাইরে থাকবে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, সেদিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি।
‘স্মার্ট হাট, স্মার্ট বাংলাদেশ’ কেমন সাড়া ফেলেছে? আগামী কোরবানি ঈদে এর বিস্তৃতি ঘটবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ইনেশিয়েটিভ। যেটার সঙ্গে ডিএনসিসি ছিল, আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি। স্মার্ট হাট, স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের পাইলটিং ছিল, এবারের সফলতা দেখে আমরা আগামী বছর অন্যান্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা লেভেলে নিয়ে যেতে পারবো। ভালো দিকটা হলো এই ‘স্মার্ট হাট, স্মার্ট বাংলাদেশ’ পরীক্ষামূলকভাবে আমরা ডিএনসিসির ছয়টি হাট নিয়ে করেছি। আমরা দেখেছি তিনদিনের গরুর হাটে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যেটা আসলেই অনুপ্রেরণামূলক। আমি সারাজীবন নগদ টাকা দিয়ে কিনতাম, এখন কোনো না কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে কিনেছি। সেটা হতে পারে কার্ড কিংবা এমএফএস। এতেই প্রমাণ করে আমরা নতুন জিনিসকে পছন্দ করি। ভবিষ্যতে অবশ্যই এটি অন্যান্য সিটি করপোরেশনে চলে যাবে। আমরা মনে করি এমন একটা পৃথিবী যেটা নগদ টাকা ব্যবহারের বাইরে থাকবে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, সেদিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি।
নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে মাস্টারকার্ডের ভিশনগুলো কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, গত জুন মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া কার্ড চালু করি। এটা নারীদের কথা চিন্তা করেই। এর আগে নারীদের জন্য আমাদের অনেক প্রোডাক্ট রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া কার্ডকে আমরা হাইলাইটস করছি, কারণ বাংলাদেশের যারা ফেসবুক কমার্স ব্যবসা করেন তাদের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই নারী। তাদের কাছে কোনো ফরমাল ট্রানজেকশন টুল ছিল না। তাদের ক্যাশ অন ডেলিভারি হতো, কুরিয়ার সার্ভিস তাদের তিনদিন পর নগদ টাকাটা বুঝিয়ে দিতো। এখানে সময়টা দীর্ঘ ছিল। আমরা এই কার্ডটির মাধ্যমে যেটি করেছি সেটি হলো এখন দিনশেষে কুরিয়ার সার্ভিস সেই নারী উদ্যোক্তার কার্ডে ওই টাকা লোড করে দিতে পারবে। ফেসবুক কমার্স করতে গিয়ে তার কিন্তু ফেসবুক অথবা গুগলে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এটা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড, সুতরাং এখান থেকে সরাসরি বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। তার টাকাটা যেহেতু কার্ডে চলে আসে সুতরাং সে এটিএম মেশিনে গিয়ে টাকা তুলতে পারবে। এটিএম মেশিনগুলো হয়তো সারাদেশে নেই, কিন্তু জেলা ও থানা লেভেলে কিন্তু এটিএম বুথ পাওয়া যাবে।
ওই নারী উদ্যোক্তা যদি গ্রাম পর্যায়ে থাকেনও সপ্তাহে এক বা দুবার অবশ্যই থানা লেভেলে যান। চাইলে একই ব্যাংকের মেশিনে কোনো খরচ ছাড়া টাকা ওঠাতে পারবেন, আর অন্য ব্যাংকে হলে মাত্র ১৫ টাকা খরচ হবে। বেশ কয়েকশ নারী উদ্যোক্তা এরই মধ্যে আমাদের এই কার্ডটি নিয়েছেন। এ ধরনের উদ্যোগ আমরা নেই এবং ভবিষ্যতেও নেবো।
‘আমাদের মাস্টারকার্ডে যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্যও প্রোডাক্ট আছে। আমাদের সঙ্গে কয়েকটি ব্যাংক কাজ করছে। আমরা এই সেক্টরে আরও কিছু কাজ করবো। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের পক্ষে আসলেই ডিজিটালি যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকতো না তাদের কীভাবে ডিজিটালি যুক্ত করা যায় সেটি দেখছি। সমস্যা হচ্ছে ডাটাবেজটা শক্তিশালী নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি, বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো এ বিষয়ে সুসংবাদ দিতে পারবো।’
নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজ করতে ও ব্যবসার প্রসারে মাস্টারকার্ডের পদক্ষেপগুলো কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবছর আমরা যেটি করেছিলাম ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের আন্ডারে আমরা পাঁচ লাখ মানুষকে এনেছিলাম। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের আন্ডারে আনবো। পাশাপাশি এমএসএমইর বিষয়টিতে এবছর এবং আগামী বছর ফোকাস করা হবে। আমরা বেশ কিছু প্রোডাক্ট এনেছি তাদের জন্য, ভবিষ্যতে আরও কিছু প্রোডাক্ট আসবে। যেটা নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে। গত বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে মিলিয়নিয়ারদের জন্য একটি প্রোডাক্ট এনেছিলাম, সেটা খুব সাকসেসফুল প্রোডাক্ট হিসেবে মার্কেটে আত্মপ্রকাশ করেছিল। যারা নতুন চাকরি পেয়েছে তাদের জন্য এটি নিয়ে এসেছিলাম। সেটি খুব ভালো কাজ করেছে।-জাগোনিউজ২৪.কম