এক সময়ের সোনালী আঁশ ছিলো পাট। পাটকে বলা হতো সাদা সোনা। সেই পাটের সুদিন আবার ফিরতে শুরু করেছে। উত্তরের জনপদ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় উৎপাদিত পাট রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
কৃষি প্রধান দেশে এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে কৃষক দুরাবস্থার সম্মুখীন হলেও চলতি মৌসুমে উপজেলায় সোনালী আঁশের দিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিগত সময়ের চেয়ে গতবছর থেকে উপজেলায় পাটের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাটচাষীরা বৃষ্টির সংকটে পড়লেও কিছুদিন পর থেকেই আকাশের পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে পাট জাগ দিতে তেমন একটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। আর বর্তমানে বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় অনেক খুশি পাটচাষীরা। এমন অবস্থা বজায় থাকলে উপজেলায় আবার পাটের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করছেন পাটচাষী ও কৃষি বিভাগ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে নওগাঁর বিভিন্ন হাট থেকে পাট কিনছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক ১১০হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গতবছর মাত্র ৭৫হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিলো আর চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ১শত হেক্টর জমি। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুঁটেছে হাঁসির ঝিলিক। সময় মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিচ্ছে কৃষকেরা। চাষিরা পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে বাজারে তা বিক্রিসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। অনেক স্থানে কৃষক খরচ বাঁচাতে রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেও কৃষকরা তাতে আগ্রহ নয়। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাটের মূল্য ৩হাজার ২’শ টাকা মণ ও নিম্ন মানের পাটের মূল্য ২৫’শ থেকে ২৮‘শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষীদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান জানান, এবার জমিতে পাট চাষ করেছিলাম পাটও ভালো হয়েছে এবং অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না। উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আকরাম মন্ডল বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ও ভালো হয়েছে। এবার আমি জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বাজারে পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আগামি বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবো বলে আমরা মনে করছি। উপজেলার ত্রিমোহনী হাটে পাট কিনতে আসা কুষ্টিয়ার বেপারী তরিকুল আলম বলেন, তারা বাপ দাদার আমল থেকে পাটের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি নিয়মিত নওগাঁর বিভিন্ন হাট থেকে পাট কিনে থাকেন। প্রতি হাটে তিনি ট্রাক করে পাট কিনে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এবার পাটের দর কিছুটা বাড়তি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। দিন দিন পাটজাতীয় পন্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই গত কয়েক বছর থেকে পাটচাষীরা বাজারে পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন। যার কারণে উপজেলাতে দিন দিন পাট চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম ও অনেক বেশি। পাটের নায্য মূল্য পেলে চাষিদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। পাট অত্যন্ত উপকারী একটি অর্থকরী ফসল। পাটের সবকিছুই কাজে লাগে। পাটের পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এছাড়া বাজারে পাটকাঠির চাহিদা সারা বছর জুড়েই রয়েছে। পাট চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পাট চাষ বৃদ্ধির লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। তাই দিন দিন উপজেলায় আরো পাটের চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশাবাদী ।